পোস্টগুলি

জুন, ২০২৩ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

বাংলা গদ্য সাহিত্যে ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের অবদান

ছবি
⇒ একদিকে ভারতের প্রাচীন আদর্শ, তার আধ্যাত্ম সাধনা, সামাজিক ও পারিবারিক চেতনা আর আরেকদিকে নবাগত পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বিজ্ঞান, যুক্তি, তর্কবাদ আর মুক্ত আচরণ - নব্য বাংলার বুকে এই যে দুটি বিপরীতমুখী সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, এরই সন্ধিক্ষণে যথার্থ যুগনায়কের মতো দাড়িয়েছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়। প্রাচ্যের অবাস্তর ভাবাদর্শকে যেমন তিনি বর্জন করেছিলেন, তেমনি যা কিছু পাশ্চাত্যের বিকৃত আদর্শ, তাকেও তিনি গ্রহণ করেননি । বিদ্যাসাগরের মতো তিনি বিরাট প্রতিভা নিয়ে  জন্মগ্রহণ করেননি সেকথা ঠিক কিন্তু নিজের নির্মিত পরিবেশে তিনি ছিলেন সম্রাট। ভূদেব মুখোপাধ্যায় সে যুগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেযুগ হিন্দু কলেজকে ঘিরে পাশ্চাত্যভাবের জাগরণের কাল। হিন্দু কলেজের শিক্ষক ডিরোজিওর সংস্কারমুক্ত আদর্শ ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীকে প্রভাবিত করেছিল। ভূদেববাবু সে যুগে জন্মগ্রহণ করেও অন্ধ পাশ্চাত্য প্রীতিতে নিমজ্জিত হননি। বরং পাশ্চাত্যভাবের আলোকে হিন্দুধর্মকে নতুন করে ব্যাখ্যা করলেন। নব্য শিক্ষিত সমাজের কাছে পুরাতন আদর্শের অনুধ্যান ও তাকে সাহিত্যকর্মে প্রকাশ ভূদেব বাবুর প্রধান কৃতিত্ব। মৃত্যুর কয়েকদিন পূর্বেও তিনি লিখেছেন - "আমা...

বাংলা গদ্য সাহিত্যে প্যারীচাঁদ মিত্রের ভূমিকা

ছবি
বাংলা গদ্য সাহিত্যে প্যারীচাঁদ মিত্রের অবদান ⇒ ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে যে সমস্ত বাঙালী মনীষী নবজাত বাংলা গদ্যের সমৃদ্ধি সাধনে যত্নবান হয়েছিলেন এবং তাকে বহুমুখী ভাব প্রকাশের উপযুক্ত শক্তিশালী করে তুলেছিলেন, তাদের মধ্যে প্যারীচাঁদ মিত্র অন্যতম। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী বিদ্যাসাগরের প্রভাবে যখন সাধুগদ্যের প্রচলন হয়ে গেছে, তখন ব্যঙ্গাত্মক, হাস্যরসাত্মক হালকা বিষয় পরিবেশনের উপযুক্ত কথ্য ভাষার প্রচলন করতে প্যারীচাঁদ যে সব থেকে বেশী উদ্যোগী হয়েছিলেন, সে বিষয়ে কোন সংশয় নেই। প্যারীচাঁদ উপলব্ধি করেছিলেন যে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সংস্কৃত ঘেঁষা গুরুগম্ভীর বাংলা ভাষা সাধারন মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তাই সর্বসাধারনের উপযোগী এমন এক ভাষা মাধ্যম তিনি গ্রহণ করেছিলেন, যার ফলশ্রুতি 'আলালের ঘরের দুলাল -এর মতো অনন্য সাহিত্যকর্ম বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর তাঁর অন্যান্য রচনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- 'মদ খাওয়া বড়ো দায়, 'জাত যাবার কী উপায়', 'রামারঞ্জিকা', 'কৃষি পাঠ', 'যৎ কিঞ্চিৎ', 'অভেদী', 'আধ্যাত্মিকা', 'ডেভিড হেয়ারের জীবনচরিত' ই...

বাংলা গদ্য সাহিত্যে বিদ্যাসাগরের অবদান

ছবি
ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উনবিংশ শতাব্দীর প্রাণ পুরুষ। উত্তুঙ্গ হিমালয় সাদৃশ ব্যক্তিত্ব, স্নেহকোমল হৃদয়, অখন্ড আত্মপ্রত্যয় নিয়ে এই মানুষটি জাতীয় জীবন, সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা- সর্বক্ষেত্রেই এক অটল মহিমা নিয়ে দণ্ডায়মান। তাঁর প্রচণ্ড পৌরুষ ও প্রশস্ত হৃদয় মানবতার ধর্মে দীক্ষা নিয়ে নরনারায়নের   সেবায় উৎস্বর্গীকৃত হয়েছিল। বাংলা গদ্য সাহিত্যের ক্ষেত্রেও তাঁর অসাধারণ মনীষা, ধীর-শক্তি, সৃজনী শক্তি এক অসামান্য লাবন্যমণ্ডিত ও শিল্পসম্মত গদ্যরীতিরও সূচনা করেছিল। যার সাহায্যে পরবর্তীকালে সৃষ্টিধর্মী সাহিত্যরচনার পথ সুগম হয়েছিল। বিদ্যাসাগর সাধারণ অর্থে সাহিত্যিক ছিলেন না। ছিলেন সমাজ সংস্কারক। কিন্তু সমাজ, শিক্ষা, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস সমস্ত বিষয়েই তিনি সচেতন ছিলেন। সমস্ত বিষয়ের উন্নতির জন্য তিনি চিন্তা ভাবনা করেছেন এবং বিভিন্ন রচনার মধ্যে তার প্রকাশও করেছেন তিনি। যে বিষয়ে চিন্তা প্রকাশ তিনি রচনার মাধ্যমে ঘটাতে চেয়েছেন তেমন রচনার উপযোগী গদ্য ভাষা তখন ছিল না। তিনি জানতেন পাঠকদের আকৃষ্ট করতে প্রচারের ভাষা সহজ হওয়া দরকার, সেই ভাষা তখন ছিল না বলেই তিনি নিজেই তা সৃষ্টিতে যত্নবান হয়েছি...

বাংলা গদ্যের বিকাশে রামমোহন রায়ের ভূমিকা

ছবি
⇒ রামমোহন রায় আধুনিক বাংলার প্রথম সুচিহ্নিত বলীষ্ট ব্যক্তিত্ব। সাহিত্যে না হলেও সেদিনকার জাতির জীবনে নতুন সৃষ্টির মহৎ প্রেরণা নিয়ে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। সেই সৃষ্টিশীল ব্যাক্তিত্ব বাংলা পদ্যকে দিয়েছে প্রথম স্বকীয়তাধর্মী স্টাইলের সমৃদ্ধি। রামমোহন কোন সৃষ্টিশীল সাহিত্য রচনায় ব্রতী ছিলেন না। ধর্ম এবং সমাজ ছিল তার লক্ষ। রক্ষনশীল হিন্দুসমাজ এবং ধর্মবিদ্বেষী পাদরী সম্প্রদায়- এই দুইয়ের বিরুদ্ধে তিনি লেখনী ধারন করেছিলেন। নিজ মত প্রতিষ্ঠা ও তত্ত্ব প্রতিপালনের আগ্রহে মূলত ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে রামমোহন প্রয়োজনের তাগিদে গ্রন্থ রচনা ও সাময়িক পত্র প্রকাশে ব্রতী হয়েছিলেন। আর এজন্য বাংলা ভাষাকে তার মাধ্যম করতে গিয়ে তিনি দেখলেন বাংলা ভাষার দুর্বলতা। ধর্ম সংস্কারের ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি গদ্য রচনার ক্ষেত্রেও রামমোহন সচেষ্ট হয়েছিলেন। তার রচনার মধ্য দিয়ে ধর্মের আচার সর্বস্বতা ও কুসংস্কার দূর করে উদার ও স্বাধীন চিন্তাধারা প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন। যার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদ। ১৮১৫-১৮৩১ খ্রীষ্টাদের মধ্যে মোট পনেরো বছরে রামমোহনের যাবতীয় বাংলা পুস্তিকা রচিত হয়েছ...

বাংলা কাব্যে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

ছবি
বাংলা মহাকাব্যের ধারায় হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্থান নির্ণয় করো। ⇒ 'বৃত্রসংহার' কাব্যের কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মধুসূদনের উত্তরসূরী রূপে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। মূলত মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্য প্রকাশের পর তার মহাকাব্য রচনার প্রতিভায় উদ্বুদ্ধ হয়ে হেমচন্দ্র মহাকবি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে বাংলা কাব্য জগতে অবতীর্ণ হন। বাংলা কাব্য জগতে রঙ্গলাল-মধুসূদন-হেমচন্দ্রের আবির্ভাব প্রায় একই সময় হলেও এদের প্রতিভা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী। রঙ্গলাল বাংলা কাব্যে স্বদেশ চেতনাকে আনয়ন করেছিলেন, মধুসূদন বাংলা কাব্যকে আধুনিকতার ঐশ্বর্যে ভরিয়ে দিয়েছিলেন, আর হেমচন্দ্র বাংলা কাব্যে হিন্দু সংস্কৃতির ভাব তথা জাতীয়তার বিকাশে সচেষ্ট হয়েছিলেন। মধুসূদন বাংলা কাব্যের যে ক্লাসিক মহিমা গড়ে তুলেছিলেন তাকে অনুসরন করা বা তার উত্তরাধীকার বহন করার মতো প্রতিভা হেমচন্দ্র বা নবীনচন্দ্র কারোরই ছিল না। তবুও মধুসূদনের পর হেমচন্দ্রই সর্বাধিক শিক্ষিত মহৎ কবি। তিনি বাংলা সাহিত্যে প্রথম গ্র্যাজুয়েট কবি । মধুসূদনকে গুরুপদে বহন করে মহাকাব্য রচনায় তিনি অগ্রসর হন। মধুসূদনের মতো প্রতিভ...

বাংলা কাব্য সাহিত্যে মধুসূদন দত্তের অবদান

ছবি
বাংলা কাব্যে মধুসূদন দত্তের অবদান ⇒ বাংলায় সাংস্কৃতিক জীবনে যে আধুনিক যুগের সূত্রপাত হয়েছিল মানবতাবোধের দৃষ্টিভঙ্গিকে আশ্রয় করে, মাইকেল মধুসূদন সেই বোধের প্রথম সার্থক এবং সোচ্চার প্রবক্তা। সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মধুসূদনের পূর্বে ভারতচন্দ্র, ঈশ্বর গুপ্ত, রঙ্গলাল প্রভৃতি কবিদের কাব্যে আধুনিক যুগের মানুষ পরিতৃপ্তি খুঁজে পাচ্ছিল না। সেই সংকটময় মুহূর্তে মধুসুদন তার বৈপ্লবিক চিন্তাধারা নিয়ে কাব্য জগতে আত্মপ্রকাশ করলেন। পাশ্চাত্য ভাবধারার সঙ্গে প্রাচ্য ভাবধারার মিলন সাধন করে তিনি যে নতুন কাব্যধারার প্রবর্তন করলেন, তাতে বাঙালী পাঠক যেমন বিস্মিত আবার তেমনি অনেকে এর বিরোধিতা করে সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন। কিন্তু ক্রমেই তার প্রতিভা স্বীকৃত হল। তিনি বাংলা সাহিত্যকে গ্রাম্যতার গণ্ডি কাটিয়ে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করলেন। মহাকবি মধুসূদন আধুনিক বাংলা সাহিত্যে সত্যি এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি পাশ্চাত্য আদর্শে মহাকাব্য, আখ্যান কাব্য, পত্রকাব্য, গীতিকাব্য, প্রভৃতির সূচনা করে মাত্র সাত বছরের মধ্যেই বাংলা কাব্যকে এক লাফে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলেন। ড. অসিত কুমার বন্দোপা...

বাংলা কাব্যে নবীনচন্দ্র সেনের অবদান সম্পর্কে আলোচনা

ছবি
বাংলা কাব্য সাহিত্যে নবীনচন্দ্র সেনের ভূমিকা কতখানি তা আলোচনা করো। ⇒ উনবিংশ শতাব্দীর এক বিস্ময়কর কবি চরিত্র হল নবীনচন্দ্র সেন। মধুসূদন ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যবর্তী সময়ে বাংলা কাব্যের ক্ষেত্রে নবীনচন্দ্র সেন ছিলেন প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন কবি। নবীনচন্দ্র কবিত্ব শক্তি এবং ব্যক্তিত্বের প্রভাবে বাংলাদেশের পণ্ডিত সমাজে আসামান্য প্রতিভা অর্জন করেছিলেন। কিশোর বয়স থেকে নবীনচন্দ্র সেন কাব্যচর্চা শুরু করেন। আত্মজীবনীর এক জায়গায় তিনি লিখেছেন-  “পাখীর যেমন গীতি, সলিলের তরলতা, পুষ্পের যেমন সৌরভ, কবিতানুরাগ আমার প্রকৃতিগত ছিল।" কবির এই উক্তি থেকে বোঝা যায় কিভাবে তিনি কাব্যচর্চায় অনুপ্রানিত হয়েছিলেন। নবীনচন্দ্র সেন মহাকাব্যের পরিকল্পনা করলেও তিনি ছিলেন আসলে গীতিকবি। প্রথম যৌবনে লেখা কবিতাগুলি সমস্তই ছিল গীতিকবিতা। বস্তুত রবীন্দ্রনাথের পূর্বে যদি কারো কবিতায় যথার্থ পাশ্চাত্য ধরনের গীতিকবিতার স্বাদ পাওয়া যায়, তবে তার কিছুটা নবীচন্দ্রের মধ্যেই পাওয়া যাবে। প্রধানত প্রেম ও প্রকৃতিকে কেন্দ্র করেই তার অধিকাংশ গীতিকবিতা রচিত হয়েছে। নবীনচন্দ্র সেন কয়েকটি আখ্যানকাব্যের জন্য বাংলা সাহিত্যে খ্যাতিলাভ কর...

বাংলা কাব্যসাহিত্যে রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

ছবি
বাংলা কাব্যসাহিত্যে রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান কতখানি? এই আধুনিক বাংলা কাব্যে রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়ের পদার্পনের ইতিহাস খুবই কৌতূহলজনক। সেই যুগের ফ্যাশন অনুসারে কলেজ পড়ুয়ার দল বাংলা সাহিত্যকে খুবই অশ্রদ্ধা করত। অমন একটি সভায় এক আধুনিক ওয়ালা ইংরেজি জানা ব্যক্তি ইংরেজি সাহিত্যের তুলনায় মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যকে তীব্র ভাষায় আক্রমন করলে, রঙ্গলাল তা সহ্য করতে পারেননি। তাই তিনি ১৮৫২ সালে বিটন সোসাইটির অধিবেশনে বাংলা কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ শীর্ষক বক্তৃতায় বাংলা সাহিত্যের প্রতি এই নিন্দার যথোচিত জবাব দেন। ঈশ্বরগুপ্তের শিষ্য রঙ্গলাল প্রথম জীবনে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবধারায় ভাবিত হয়ে আধুনিক বাংলা কাব্যে নতুন সুরের প্রবর্তন করেন। বাংলা কাব্যের পুরাতন রীতি তিনি অনুসরন করেছিলেন ঠিকই কিন্তু ঐতিহাসিক কাহিনীর মধ্য দিয়ে স্বদেশপ্রেমের আবেগকে তিনি বাংলা কাব্যে সঞ্চার করে দিলেন। তার কাব্য রচনার মূল প্রেরনা হল দেশাত্মবোধ। উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে পরাধীনতার গ্লানিকে কেন্দ্র করে যে দেশাত্মবোধের উদ্বোধন ঘটে, রঙ্গলাল সেই যুগধর্মকে তার কাব্যে রূপ দিয়েছেন। স্বদেশপ্রেম ও ইতিহাসের পটভূমিকা...

বাংলা গদ্য সাহিত্যে শ্রীরামপুর মিশনের অবদান

ছবি
বাংলা গদ্য সাহিত্যে শ্রীরামপুর মিশনের অবদান => বাংলা গদ্যের চর্চার ক্ষেত্রে শ্রীরামপুর মিশনের অবদান হল অপরিসীম। প্রধানত বঙ্গদেশে খ্রীষ্টধর্ম প্রচারের জন্যই কলকাতার নিকটবর্তী হুগলীর শ্রীরামপুরে ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দে খ্রীষ্টান মিশনারীরা এই মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। ইংরেজ শাসন শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনের কাজ-কর্মে এবং জীবিকার প্রয়োজনে শিক্ষার গুরুত্ব দ্রুতবেগে বাড়তে থাকে। ইংরেজরা শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্য গদ্যচর্চা করতে থাকেন। বিশেষ প্রয়োজনবোধকে সামনে রেখেও মিশনারীরা লেখ্য গদ্যভাষা গড়ে তোলার যে প্রত্যক্ষ প্রয়াসে আত্মনিয়োগ করেছিলেন, তাতে বাংলা গদ্যের উদ্ভবপর্ব স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শ্রীরামপুর মূলত খ্রীষ্টানদের বানী প্রচারের একটি মিশন। এদেশে খ্রীষ্টধর্ম প্রচার করাই ছিল এই মিশনের উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য নিয়ে কয়েকজন ইংরেজ ধর্ম প্রচারক অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে দুজনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে একজন হলেন উইলিয়াম কেরী ও অন্যজন হলেন ডাঃ টমাস। কলকাতায় খ্রীষ্টান ধর্ম প্রচারের নানাবিধ অসুবিধা দেখা দেওয়ার ফলে উইলিয়াম কেরী শ্রীরামপুরে ...

বঙ্কিমচন্দ্রকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রতিষ্ঠাতা বলা যায় কী?

ছবি
বঙ্কিমচন্দ্রকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রতিষ্ঠাতা বলা যায় কী?  => বঙ্কিমচন্দ্রের তিরোধানের পর এক স্মরণসভায় রবীন্দ্রনাথ বঙ্কিমচন্দ্রকে সব্যসাচী আখ্যা দিয়েছিলেন। রসস্রষ্টা ও বিচারক রূপে বঙ্কিমের সিদ্ধি উত্তরসূরী রবীন্দ্রনাথের সশ্রদ্ধ স্বীকৃতি লাভ করেছিল। চন্দ্রনাথ বসু লিখেছিলেন- "অভ্যাগতদিগের অভ্যর্থনা করিতেছি এমন সময়ে একটা বিদ্যুৎ সভাগৃহে প্রবেশ করিল।" এই বিদ্যুৎ বাংলা সাহিত্যে সব্যসাচী বঙ্কিমচন্দ্র। উনবিংশ শতাব্দীর এক বিশেষ লগ্নে বঙ্গদর্শনের সম্পাদক বঙ্কিমচন্দ্রের আবির্ভাব। বঙ্কিম প্রতিভা ও পাশ্চাত্য ভাবধারাকে সাঙ্গীকৃত করেছিল বলেই বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে তাঁর খ্যাতি স্রষ্টা ও সম্পাদক হিসেবে। সেকেলে সমস্ত সাহিত্যযশ প্রার্থীদের মতোই বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যে হাতে খড়ি হয়েছিল ইশ্বরগুপ্তের পাঠশালায় । তার সাহিত্যের প্রচেষ্টার প্রথম স্বাক্ষর হচ্ছে 'ললিতা' আর মানস কাব্যগ্রন্থ। ঔপন্যাসিক বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম আত্মপ্রকাশ তার 'দুর্গেশনন্দিনী' উপন্যাসে। উপন্যাসটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য জগতে বিরাট একটি আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল । একবছর পরে 'কপ...

বাংলা কবিতায় ঈশ্বর গুপ্তের কৃতিত্ব

ছবি
বাংলা কবিতার পালাবদলে ঈশ্বর গুপ্তের কৃতিত্ব ⇒ উনিশ শতকের তৃতীয় দশক থেকে প্রায় মধ্যভাগ পর্যন্ত বাংলা সংস্কৃতি ও কাব্য কবিতায় কবি ঈশ্বর গুপ্ত বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তিনি একাধিক সাময়িক পত্র পরিচালনার সূত্রে সংবাদপত্রের চাহিদা মতো বহু কবিতা লিখেছেন। তাই তার কবি প্রতিভার স্বভাবই ছিল সাংবাদিক ধরনের। সংবাদিকতাই তার কবিতার শ্রেষ্ঠ পরিচায়ক। ঈশ্বর গুপ্তকে পুরানো ধারার শেষ লেখক এবং নতুন ধারার প্রথম লেখক বলা যায়। কবিতাতে যদিতে তার পুরাতন ধারার প্রতি আনুগত্য লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু স্বাদেশিকতায় তিনি ছিলেন নতুন ধারার অগ্রদুত। মঙ্গলকাব্যের প্রাচীন ধারাটিকে বর্জন করলেও ভারতচন্দ্র ও কবিওয়ালাদের স্থূল রসিকতা তার মধ্যে দেখা যায়। তবে অন্যদিকে স্বাদেশিক মনোভাব ও রঙ্গব্যঙ্গের তীক্ষ্ণধার সৃষ্টি ও নতুন পুরাতনের প্রভাব স্বীকার করে নেওয়া তার কবি প্রতিভা ও মানসিক প্রবনতার একটা বড়ো বৈশিষ্ট্য। ঈশ্বর গুপ্ত অল্প বয়সে পদ্যরচনায় হাত দিয়েছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি কবিগানের দলের জন্য গান রচনা করে দিতেন। তার অধিকাংশ কবিতা সংবাদ প্রভাকর ও অন্যান্য সাময়িক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ঈশ্বর গুপ্তের কবিতাগ...

বাংলা গদ্যের উদ্ভবে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ভূমিকা

ছবি
বাংলা গদ্যের উদ্ভবে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ভূমিকা ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনাপর্বে বাংলা গদ্যের বিকাশে যে সব প্রতিষ্টান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ তাদের মধ্যে প্রধান। প্রশাসনিক কাজে সাফল্য ও গতি বাড়াতে ওয়েলেসলি নবাগত সিভিলিয়ানদের আঞ্চলিক ভাষায় কিছুটা শিক্ষিত করে কাজে নিয়োগ করতে মনস্ত করেন। সেই জন্যই ১৮০০ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্টা করা হয় । এই কলেজের বাংলা, মারাঠি ও সংস্কৃত বিভাগের অধ্যক্ষ পদে যোগ দিয়ে উইলিয়ম ফোর্ট বুঝেছিলেন গদ্য ভাষায় রচিত পাঠ্য বই না হলে ভাষা শিক্ষাদান সম্ভব নয়। সেজন্য প্রথম থেকেই তিনি পাঠ্যবই রচনার দিকে মনোযোগ দেশ। কলেজের কাজ আরম্ভের প্রথম বছরেই রামরাম বসুর 'রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র' প্রকাশিত হয়। এইটি বাংলা অক্ষরে ছাপা প্রথম মৌলিক বাংলা গদ্যগ্রন্থ । কেরি সাহেব ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পাঠ্যবই রচনার জন্য রামরাম বসুকে তার পূর্ব পুরুষ রাজা প্রতাপাদিত্য সম্পর্কে একটা জীবনী ও ইতিবৃত্ত লিখতে বলেন। রামরাম বসু নানা ফার্সি উপাদান থেকে তথ্যাদি সংগ্রহ করে এই গ্রন্থটি রচনা করেন। রামরাম বসু ছাড়াও যে সমস্ত পন্ডিতদের দিয়ে কেরি মা...

বিসর্জন নাটকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য | WBPSC বাংলা প্রশ্ন উত্তর

ছবি
নাট্যকার পরিচিতি বাংলা সাহিত্যে কবি রবীন্দ্রনাথ (১৮৬১-১৯৪১) একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক এবং সাহিত্য সমালোচক। বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি। আপন প্রতিভার গুণে তিনি সব ক্ষেত্রেই নতুন কিছু লিখেছেন যা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর প্রথম কবিতা ‘হিন্দুমেলার উপহার' ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুমেলায় পঠিত হয়। প্রথম কাব্য 'বনফুল' (১৮৭৬) হলেও তাঁর প্রথম মুদ্রিত কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী' (১৮৭৮) । এরপর একে গ্রন্থিত হয়েছে তাঁর নানা কাব্য। কথাসাহিত্যেও তিনি নতুন পথ দেখিয়েছেন বাংলা সাহিত্যকে। তিনিই প্রথম সার্থক ছোটোগল্পের রূপকার। কাব্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস বা ছোটোগল্পের পাশাপাশি তিনি বাংলা নাট্যসাহিত্যের ধারাতেও এনেছেন নতুনের ছোঁয়া। কবির লেখা প্রথম নাটক ‘রুদ্রচণ্ড'। এরপর একে একে রচিত হয়েছে নানা শ্রেণির নাটক। বাংলা নাট্যসাহিত্যে রূপক-সাংকেতিক তত্ত্ব নাটকের তিনিই প্রথম সার্থক স্রষ্টা। তাঁর বিভিন্ন শ্রেণির নাট্য তালিকায় আছে - ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘রক্তকরবী', 'রাজা', 'বিসর্জন', ‘ডাকঘর’, ‘অচলায়তন’, ‘...

শৈলীবিজ্ঞান কী? শৈলীবিজ্ঞানের ধারা সম্পর্কে আলোচনা

ছবি
শৈলীবিজ্ঞান : ল্যাটিন শব্দ ‘স্টিলোস’-এর অর্থ মোমের চৌকো টুকরোতে লেখার ছুঁচলো কলম। এই স্টিলোস থেকে 'স্টাইল' শব্দের উৎপত্তি। ইংরেজি স্টাইলের অর্থ ‘রীতি’ বা “শৈলী”। বর্তমানে ‘রীতি’ অপেক্ষা 'শৈলী'র আবেদন বেশি। বস্তুত 'শৈলী' লেখকের সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের প্রকাশ। তাঁর চিন্তন, মনন, অনুভবের যে নিজস্ব রীতি—তার প্রকাশই হল শৈলী। শৈলীবিজ্ঞান হল শৈলী সম্পর্কে বিধিবদ্ধ আলোচনা। ভাষার উপকরণে মিশে থাকে ব্যক্তিগত প্রবণতা, বিশেষ সামাজিক পরিস্থিতি, সাহিত্যিক প্রেরণা—ভাষা ব্যবহারকারী একটা নিজস্ব ধারা স্থাপন করে, যার মাধ্যমে লেখকের নিজস্ব সত্তাটি ধরা পড়ে। তাঁর সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। এই যে লেখক-কবির নিজস্ব প্রকাশ রীতি, তাই হল শৈলী। আর এ সংক্রান্ত আলোচনা শৈলীবিজ্ঞান বা Stylistics। ভারতীয় সাহিত্যে বামনাচার্য অনেক কাল পূর্বেই রীতিবাদের আলোচনায় বিশিষ্ট পদরচনা রীতি'র কথা বলেন। এই শব্দ বা পদ বিন্যাসের বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গিই রীতির মূল। রীতি সূত্রেই বাক্য কাব্য হয়। ‘রীতিরাত্মা কাব্যস্য' বিশ্বনাথ রীতিকে দেখেছেন কাব্যের বিশিষ্ট অবয়ব সংস্থানে বিষয় হিসেবে। রীতয় অব...