WBSSC Group C ও D পরীক্ষার্থীরা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে অবশ্যই এই বইটি দেখতে পারেন। কঠোর পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই।

বাংলা কাব্যসাহিত্যে রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান

বাংলা কাব্যসাহিত্যে রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান কতখানি?


এই আধুনিক বাংলা কাব্যে রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়ের পদার্পনের ইতিহাস খুবই কৌতূহলজনক। সেই যুগের ফ্যাশন অনুসারে কলেজ পড়ুয়ার দল বাংলা সাহিত্যকে খুবই অশ্রদ্ধা করত। অমন একটি সভায় এক আধুনিক ওয়ালা ইংরেজি জানা ব্যক্তি ইংরেজি সাহিত্যের তুলনায় মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যকে তীব্র ভাষায় আক্রমন করলে, রঙ্গলাল তা সহ্য করতে পারেননি। তাই তিনি ১৮৫২ সালে বিটন সোসাইটির অধিবেশনে বাংলা কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ শীর্ষক বক্তৃতায় বাংলা সাহিত্যের প্রতি এই নিন্দার যথোচিত জবাব দেন।


ঈশ্বরগুপ্তের শিষ্য রঙ্গলাল প্রথম জীবনে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবধারায় ভাবিত হয়ে আধুনিক বাংলা কাব্যে নতুন সুরের প্রবর্তন করেন। বাংলা কাব্যের পুরাতন রীতি তিনি অনুসরন করেছিলেন ঠিকই কিন্তু ঐতিহাসিক কাহিনীর মধ্য দিয়ে স্বদেশপ্রেমের আবেগকে তিনি বাংলা কাব্যে সঞ্চার করে দিলেন। তার কাব্য রচনার মূল প্রেরনা হল দেশাত্মবোধ। উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে পরাধীনতার গ্লানিকে কেন্দ্র করে যে দেশাত্মবোধের উদ্বোধন ঘটে, রঙ্গলাল সেই যুগধর্মকে তার কাব্যে রূপ দিয়েছেন। স্বদেশপ্রেম ও ইতিহাসের পটভূমিকায় বীররসকে কেন্দ্র করে মানবচেতনাকে উদারতার ক্ষেত্রে মুক্তি দেওয়ার জন্য রঙ্গলাল কাব্য জগতে স্মরনীয় হয়ে থাকবেন।


রঙ্গলালের শ্রেষ্ট কাব্য 'পদ্মিনী উপাখ্যান'। এই আখ্যানকাব্যের বিষয়বস্তু গৃহীত হয়েছে টডের 'Anals and antiquities of Rajasthan' নামক গ্রন্থ থেকে। কাব্যের মূল বিষয় অসাধারণ সুন্দরী পদ্মিনীকে পাওয়ার জন্য আলাউদ্দিন চিতোর আক্রমন করেন। যুদ্ধে রানা রতন সিংহের মৃত্যু হয়, তখন রানী পদ্মিনী সতীধর্ম ও মর্যাদা রক্ষার তাগিদে জহরব্রতে আত্মাহুতি দেন।


রঙ্গলাল যখন পদ্মিনী উপাখ্যান লেখেন তখনও পর্যন্ত ইংরেজ শাসনের প্রতি এদেশের শিক্ষিত মানুষের মনে শ্রদ্ধাবোধের অভাব দেখা যায়নি। স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাও তীব্র হয়ে ওঠেনি। রাজপুত বীরত্বের যে কাহিনী রঙ্গলাল রচনা করলেন তার মধ্যে কোথাও কোথাও স্বদেশপ্রীতি এবং স্বাধীনতার জন্য আকাঙ্ক্ষাও উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছে। ক্ষত্রিয়দের উদ্দেশ্যে রানা ভীমসিংহের উৎসাহবানী সকলের যেন কণ্ঠস্থ আছে-


"স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে কে বাঁচিতে চায়
দাসত্ব শৃঙ্খল বলো কে পরিবে পায় হে কে পরিবে পায়।"


এই অংশটি পরবর্তী যুগে স্বদেশীবার্তার উদ্বোধনের উদ্দীপনা জুগিয়েছে। 


'কর্মদেবী', 'শূরসুন্দরী 'এবং 'কাঞ্চীকাবেরী' রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। মধুসূদনের 'তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য' এবং 'মেঘনাদবধ কাব্য' প্রকাশ হয়ে যাবার পর রঙ্গলালের এই কাব্যগুলি তেমন গুরুত্বলাভ করতে পারেনি। 'কর্মদেবী' কাব্যের ইতিহাস রাজপুত ইতিহাস থেকে নেওয়া। রাজপুত কাহিনি-নির্ভর তার তৃতীয় কাব্য 'শূরসুন্দরী' প্রকাশিত হয় ১৮৬৮ খ্রীষ্টাব্দে। নারীর সতীত্ব রক্ষা এই কাব্যের মূল বিষয়। শেষ আখ্যান কাব্য কাঞ্চীকাবেরীর বিষয়বস্তু একটু অভিনব। এর বিষয়বস্তু গৃহীত হয়েছে উড়িষ্যার ইতিহাস থেকে। ড. সুকুমার সেন এই কাব্য সম্পর্কে বলেছেন-


"কাঞ্চীকাবেরীর বিষয় বেশ রোমান্টিকতার উপর ভক্তিরসের প্রবাহ থাকায় অধিকতর হৃদয়গ্রাহী। ভাষা সরলতর এবং ছন্দপ্রবাহ সুললিত।"


কবি হিসেবে রঙ্গলাল আরও কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। তার মধ্যে 'কুমারসম্ভব' কাব্যের অনুবাদ এবং টমাস গারনেলের 'দ্যা ব্যাটল অব দ্যা ফ্রগস্ এন্ড মাইস' অবলম্বনে রচিত 'ভেক মুষিকের যুদ্ধ' উল্লেখযোগ্য। প্রথমটি গম্ভীর রসের এবং দ্বিতীয়টি হল ব্যঙ্গকাব্য। এইসব কাব্য রঙ্গলালের প্রতিভার নিদর্শন নয়।


ঈশ্বর গুপ্ত ও মধুসূদনের মধ্যবর্তী সময়ে রঙ্গলাল বাংলাদেশের প্রধান কবিরূপে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। তিনি নতুন ভাববস্তু প্রকাশ করতে চেয়েছেন। নতুন ধরনের কাব্য রচনায় উৎসাহবোধ করেছেন। কিন্তু ভাষা ও ছন্দ এবং প্রকাশরীতির ক্ষেত্রে একান্তভাবেই তিনি প্রাচীনরীতির অনুবর্তন করেছেন। বিষয়বস্তুর দিক থেকে তিনি বাংলা কাব্যে পালাবদলের সূচনা করেছিলেন ঠিকই কিন্তু কাব্যের আত্মিক রূপান্তর যে কাব্যদেহের রূপান্তর ছাড়া হয় না, সেটা রঙ্গলাল বোঝেননি।


যাই হোক এতসবের পরেও বলা যায় যে রঙ্গলাল বাংলা কাব্যের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন মূলত কয়েকটি কারণে। 


প্রথমত, নতুন ধরনের কাব্যরচনার নান্দীপাঠ তিনিই করেন। 

দ্বিতীয়ত, বাংলা আখ্যানকাব্যে দেশপ্রেমের উজ্জীবন, স্বদেশচেতনার প্রভাব তার 'পদ্মিনী' উপাখ্যান থেকেই শুরু হয়। 

তৃতীয়ত, সংস্কৃত, ইংরেজী, উড়িয়া প্রভৃতি ভাষা সাহিত্য অবলম্বনে বাংলা কাব্য রচনা অথবা অনুবাদের ঘটনাও তিনিই করেন।

পথিকৃত হিসেবে তিনি বাংলা সাহিত্যকে যা দিয়ে গেছেন, তার জন্য তাকে সম্মানের আসনে বসাতে হয়।



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

👉কম আলোয় পড়াশোনা করা আমাদের চোখের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই ছাত্র-ছাত্রীরা সাবধান হও। FLYNGO ব্র্যান্ডের এই সেরা টেবিল ল্যাম্পটি পাবেন মাত্র ₹379 টাকায়! *অফারটি সীমিত সময়ের জন্য!

Pigeon ব্র্যান্ডের এই সেরা ইলেকট্রিক কেটেলটি পাবেন মাত্র ₹579 টাকায়। *অফারটি সীমিত সময়ের জন্য!