মিথ্যার বেসাতি
ভাঙ্গা কড়ি ছয় বুড়ি গামছা বান্ধিয়া।
ছাওয়ালের মাথায় বোঝা দিলেক তুলিয়া ৷৷
কড়ি বুড়ি নাই ভাঁড়ু, বাক্যমাত্র সার।
ত্বরায় পাইল গিয়া নগর বাজার ।।
ধনা নামে চালুয়া পসার দিয়া আছে।
ধীরে ধীরে ভাঁড়ু দত্ত গেল তার কাছে ।।
ভাঁড়ু দত্তে বোলে ধনা চাউল দেয় মোরে।
তঙ্কা ভাঙ্গাইয়া কড়ি দিয়া যাইমু তোরে ।
ধনাঞি বোলে ভাঁড়ু দত্ত চাউল নাই এথা।
বারে বারে খাও চাউল কহি মিথ্যা কথা ॥
তঙ্কা ভাঙ্গাইয়া আগে মজুতে আন কড়ি।
রুজু দিয়া পাঠাইমু চাউল পাইবা বাড়ী ।
ভাঁড়ু দত্তে বোলে ধনা কহিয়ে তোমারে।
ধনের গর্বে এথ কথা কহসি আমারে ।
ঘরের ভিতরে ধন আছে গোফা গোফা।
গিরির মাথায় চুল নাঞি নাবার মাথায় যে খোপা।।
ভাল মোর অধিকার আছয়ে নগরে।
কালুকা পাইমু তোরে হস্তের উপরে ।।
ভাঁড়ুর বচনে ধনা কাঁপে থর থর।
আস্তে বোস্তে উঠিয়া চাপিয়া ধরে কর ।।
পরিহাস কৈলাম তাই করি দরাদরি।
চাউল নিয়া খাও তুহ্মি কড়ি দিয় বাড়ি ।।
এথেক শুনিয়া ভাঁড়ু বসিল চাপিয়া ।
সের অষ্ট দশ চাউল লইল মাপিয়া ।।
চাউল লইয়া হইল তবে ভাঁড়ুর গমন।
পুরার পসারে গিয়া দিল দরশন ।।
ভাঁড়ু দত্তে বোলে পুরা কহি নিজ কাজ।
বাছিয়া বাছিয়া মোরে দেয়ত আনাজ ।।
নিত্য নিত্য যোগাও আনাজ দেয়ত আমারে।
তঙ্কা ভাঙ্গাইয়া কড়ি দিয়া যাইমু তোরে।।
সাত পাঁচ বুলি তারে বোলে ভাই ভাই।
শাক বাইগন মুলা লইল তার ঠাঞি ।।
আনাজ লইয়া হইল ভাঁড়ুর গমন ।
লোনের পসারে গিয়া দিল দরশন ।।
মলুকি মলুকি বলি গেল তার কাছে।
কালুকার মুজ বাকি তোহ্মা স্থানে আছে ।।
বিশ্বাস বোলাই বীরে আনায়ে গোচর।
কথেক মজুত কড়ি বোলয়ে সত্বর ।।
মলুকিরা আড়াঙ্গ করিলা স্থানে স্থানে।
তে কারণে তোমার লোন কেহ নাহি কিনে ৷৷
তোর ভাগ্যে সেইখানে আছিলাম আপনি'।
প্রকারে বুঝাইয়া শান্ত কৈলাম বীরমণি ।।
মলুকি বোলে ভাঁড়ু দত্ত কৈলা উপকার।
কিছু লোন লই যাহ আপনে খাইবার ।।
লবণ লইয়া হইল ভাঁড়ুর গমন ।
তৈলের পসারে গিয়া দিল দরশন ।।
কি তৈল কি তৈল বলি হাত জাবড়ায়ে।
আপনার গোপে দিল ছাবালের মাথায় ।।
ভাঁড়ু দত্তে বোলে তেলী তৈল দেয় মোরে।
তঙ্কা ভাঙ্গাইয়া কড়ি দিয়া যাইমু তোরে।।
ক্রোধ না কর ভাঁড়ু মোর দিকে চাহ।
এক পাৰা তৈল দেম বাকিতে লইয়া যাহ ।।
তৈল লৈয়া হইল ভাঁড়ুর গমন ।
পানের পসারে গিয়া দিল দরশন ।।
ভাঁড়ু দত্তে ৰোলে বারুই কহি তোমার ঠাঁই।
কালু গুরু-কৃত্য' পঁচিশ বিড়া পান চাহী ৷
বারুই বোলে ভাঁড়ু দত্ত আইলা এথায়।
পাঁচ বিড়া পান নেয় কড়ির নাঞি দায় ।।
পান লইয়া হইল ভাঁড়ুর গমন ।
গুয়ার পসারে গিয়া দিল দরশন ।
ভাঁড়ু দত্ত বোলে পসারী ওয়া দেয় মোরে।
তঙ্কা ভাঙ্গাইয়া কড়ি দিয়া যাইমু তোরে।
পসারী বোলে ভাঁড়ু দত্ত গুয়া নাঞি এথা।
বারে বারে খাও গুয়া কহি মিথ্যা কথা ।।
তঙ্কা ভাঙ্গাইয়া মজুতে আন কড়ি ।
রুজু দিয়া পাঠাইৰ গুয়া পাইবা বাড়ী ।।
ভাঁড়ু বোলে তোর বাক্যে লাগিল তরাস ।
গুয়ার কড়ি হোতে ফান্দা পাইমু একমাস।
সেই খানে বসি ছিল গোবিন্দ পালিত।
কি কইলা কি কইলা ভাঁড়ু বাক্য বিচলিত ।।
ভাঁড়ু দত্তে বোলে প্রজা বার্তা নাহি পাও।
সুখে অন্ন জল খাও সুখে নিদ্রা যাও ।
মহাবীর স্থানে লেখিছে দণ্ডধর।
ত্বরায়ে পাঠাইয়া দের গুজরাটের কর।
পত্র পড়িয়া চাহি ব্যাধনদন।
বোলে কোন্ মতে হইব গুজরাটের ধন ।।
হেনকালে ৰসিছিলাম বীরের একুধারে।
যথেক ফান্দার ভার দিলেক আমারে ।।
যথ কথা কহে বীর আহ্মা করি বড়া।
গাড়ু কম্বল দিল পাটের পাছোড়া ৷
কালুকা প্রভাতে পাইক পাঠাইমু থরে থরে।
তুলিয়া দিবেক টান গাছের উপরে ।।
ভরতের শাপে লোক হইয়া গেল মুড়া।
সাক্ষাতে থাকি পুত্র বাপ আটকুড়া ।।
ভাঁডুর বচনে প্রজা অন্তরে কাঁপিল।
করে ধরি ভাঁড় দত্তের কহিতে লাগিল ।।
পরিহাস্য কৈল বাপু কৈল দরাদরি।
ওয়া নিয়া খাও তুহ্মি নাহি দিয় কড়ি ।।
গুয়া লইয়া হইল ভাঁড়ুর গমন।
মধ্যনগর হাটে গিয়া দিল দরশন ।।
মধ্যনগরে ভাঁড়ু প্রজা করে বল।
চিড়া মিঠা লৈল ভাঁড়ু সন্দেশ বহুল ।।
বেসাতি করয়ে ভাঁড়ু কাররে না দে কড়ি।
পসার দিয়া বসিয়াছে ঘোষের মাও বুড়ী ।
তের বুড়ির দধি ভাঁড়ু হস্তে করি লইল।
সেই দধি লই ভাঁড়ু সত্বরে চলিল ।।
ভাঁড়ু দত্তে বোলে শুন ঘোষের মাও বুড়ী।
দধি খাইবার যাই বাড়ীত লইয় কড়ি ।।
পরিচারক নাই বাপু দোহাইতে গাঞি।
স্বকীয় দ্রব্য নহে তোর ধারে দিয়া যাই ।।
কথার ছেছর তুমি দধি খাইতে চাহ।
আপনার মাথাটি খাও দধি এড়ি যাও ।।
ভাঁড়ু দত্তে বোলে বুড়ী কি বলিব তোরে।
ধনের গর্বে এথ কথা বোলহ আাহ্মারে ।।
তোর পুত্র শ্যান ঘোষ তে কারণে সহি।
অন্য জন হইলে এহার কথা কহি ।।
চোৱা গাই কিনিয়া বুড়া তোমার বসত।
এহার বাদী হইয়াছে গ্রামের রায়ত ।।
ভাঁড়ুর বচনে বুড়ার অন্তরে কম্পিল।
করেত ধরিয়া তাকে কহিতে লাগিन ॥
পরিহাস কৈল বাপু কৈল দরাদরি।
খাও নিয়া দধি তুহ্মি কাইল দিও কড়ি ৷৷
দধি লইয়া হইল ভাঁড়ুর গমন ।
মাছের পসারে গিয়া দিল দরশন ।।
মেছুনী কর্তৃক ভাঁড়ুকে উপযুক্ত শিক্ষা দান
মাছোনি বসিছে মৎস্যের পসার লইয়া কোলে ।
পসার হোস্তে মৎস্য ভাঁড়ু বাছি বাছি তোলে ।
মৎস্য ধরি ডোমনীয়ে করে টানাটানি।
কড়ি না দিয়া মৈছ্য লইয়া যাও কেনি ।।
ভাঁড়ু দত্তে বোলে ডোমনী বলিরে তোমারে ।
এথ কাল মৎস্য বেচ কর দেয় কারে ।।
ডোমনীয়ে বোলে ভাঁড়ু তুই তার কে।
করের লাগি ধরিবেক জোয়াতি হয় যে ।
এই মুখে তুমি আহ্মার মৈছ্য খাইবা ।
আমার সঙ্গে অখনে বীরের স্থানে যাইবা ।
গালাগালি করিল বহুল হুড়াহুড়ি।
কচ্ছ হোতে ভাঁড়ু দত্তের পড়ে ভাঙ্গা কড়ি ।
ভাঙ্গা কড়ি পড়ে ভাঁড়ু বহু লজ্জা পায়ে।
মৎস্য এড়িয়া ভাঁড়ু উঠিয়া পলায়ে ।।
সারদার চরণে সরোজ-মধু-লোভে।
দ্বিজ মাধবে তথি অলি হৈয়া শোভে ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন