আর্য কোনো জাতি নয়, ভাষা। প্রাচীন ভারতে ইন্দো-ইউরোপীয় (আর্য) ভাষাভাষী যে জাতি ভারতে বসতি স্থাপন করে, তারাই আর্য নামে পরিচিত হয়। প্রাচীন বৈদিকযুগে আর্যদের বাসভূমি ছিল পাঞ্জাবকে কেন্দ্র করে সমগ্র উত্তর ভারতে।
হরপ্পা সভ্যতা ও বৈদিক সভ্যতার পার্থক্য :
প্রথমত,
নগর বনাম গ্রাম : হরপ্পা সভ্যতা ছিল নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। মহেন-জো-দারো, হরপ্পা, চান-হু-দারো, কালিবঙ্গান, লোথাল প্রভৃতি নগরাঞ্চল ছিল হরপ্পা সভ্যতার মূল উপাদান। পোড়া ইটের তৈরি বাড়ি ও ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালীসহ সুপ্রশস্ত পাকা রাস্তা নিয়ে নগরগুলি গড়ে উঠেছিল। কৃষিব্যবস্থা থাকলেও ব্যাবসাবাণিজ্য, পশুপালনই ছিল এখানকার অধিবাসীদের প্রধান বৃত্তি। অন্যদিকে, আর্য সভ্যতার অধিবাসীরা গ্রামে বাস করতেন। বাসস্থান ছিল কুটির, বৃত্তি কৃষিকার্য।
দ্বিতীয়ত,
সময়কাল : হরপ্পা সভ্যতার সূচনা হয় আর্য সভ্যতার বহু পূর্বে। হরপ্পা সভ্যতার সময়কাল ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০-২৫০০ অব্দ। আর্য সভ্যতার সূচনা হয় খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দের পর।
তৃতীয়ত,
অধিবাসী : হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা ছিল কৃষ্ণকায় ও খর্বাকৃতি। অনেকে দ্রাবিড় জাতিকে হরপ্পার আদি অধিবাসী বলে মনে করেন। আর্য সভ্যতার অধিবাসীরা অর্থাৎ আর্যরা ছিল গৌরবর্ণ ও দীর্ঘাকৃতি।
চতুর্থত,
ধাতুর ব্যবহার ও পশুপালন : হরপ্পা সভ্যতায় তামা ও ব্রোঞ্জ ধাতুর ব্যবহার বিদ্যমান ছিল। এই সভ্যতাকে তাম্র-ব্রোঞ্জযুগীয় সভ্যতা বলা হয়। এসময় লোহা ধাতুর ব্যবহার জানা ছিল না। গৃহপালিত পশুর মধ্যে বৃষের বিশেষ সমাদর ছিল। আর্য সভ্যতা ছিল লৌহযুগীয় সভ্যতা। এই সময়ে লোহা ধাতুর ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। গৃহপালিত পশুর মধ্যে গোরু বিশেষ সমাদর লাভ করে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন