প্রস্তর যুগ কয় ভাগে বিভক্ত?
পণ্ডিতেরা অনুমান করেন যে, খ্রিস্ট জন্মের পাঁচ লক্ষ বছরের আগেই ভারতে মানুষের বসবাস শুরু হয় এবং সভ্যতার সূচনা ঘটে। এ সময়ের লিখিত বিবরণ নেই, কারণ, কোনো হস্তলিপি ছিল না। মানুষের ব্যবহার করা যন্ত্রপাতি, পাথরের হাতিয়ার ও জিনিসপত্রের ওপর ভিত্তি করে এ সময়ের ইতিহাস লেখা হয়। তাই এই যুগকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয়।
■ প্রস্তর যুগ—ত্রিস্তর :
পাথরের হাতিয়ার এবং তার আকৃতি দেখে পণ্ডিতেরা প্রস্তর যুগকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা—প্রাচীন প্রস্তর যুগ বা Palaeolithic (Palaeo = old, lithic = stone) age, মধ্য প্রস্তর যুগ বা Mesolithic (Meso = মধ্য) age, এবং নব্য প্রস্তর যুগ বা Neolithic (Neo = new) age.
• প্রাচীন প্রস্তর যুগ :
আনুমানিক ৮০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে ভারতে এই যুগ শেষ হয়। এই যুগে মানুষ পাথরের যে সব হাতিয়ার ব্যবহার করত তার আয়তন ছিল বিরাট ও তার মসৃণতা ছিল না; হাতিয়ারগুলি দেখতেও সুন্দর ছিল না। তারা একই হাতিয়ার দিয়ে মাংস কাটা, কাঠ কাটা ও শিকারের কাজ চালাত। এগুলিকে হাত কুঠার বলা হত। এ যুগে মানুষ কৃষিকার্য বা আগুনের ব্যবহার জানত না। তাদের স্থায়ী বাসস্থানও ছিল না । যাযাবরের মতো নানা রকম ফল, মূল ও কাঁচা মাংস খেয়ে জীবন ধারণ করত। এই যুগে মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রাহক—খাদ্য উৎপাদক নয়।
ভারতবর্ষে এ যুগের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে বর্তমান পাকিস্তানের সোয়ান নদীর পারে, মধ্য ভারতে নর্মদা নদীর তীরে এবং দক্ষিণ ভারতে তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে। এ যুগেও মানুষ সৌন্দর্যবোধের পরিচয় দিয়েছে। স্পেনের আলতামিরা গুহাচিত্রের মতো ভারতের মধ্য প্রদেশেও গুহাচিত্র পাওয়া গিয়েছে।
• মধ্য প্রস্তর যুগ :
মোটামুটি ৮০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ থেকে ৪০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত ভারতে এই যুগ স্থায়ী হয়। এই যুগ ছিল পরবর্তী যুগের প্রস্তুতি পর্ব। মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষও ছিল মূলত শিকারজীবী, তখনও তারা খাদ্য উৎপাদন করতে শেখেনি। মানুষের ব্যবহৃত পাথরের হাতিয়ারের ক্ষুদ্র আকৃতিই এই যুগের বৈশিষ্ট্য। এই যুগের শেষ দিকে জীবজন্তুকে পোষ মানানো এবং মৃৎশিল্প ও কৃষিকার্যের সূচনা হয়। কুমোরের চাক তখনও আসেনি।
ভারতে মধ্য প্রস্তর যুগের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে মধ্য ভারত, ছোটোনাগপুর, কৃষ্ণা নদীর তীরে, পাঞ্জাবের উচালি, গুজরাতের হীরাপুর প্রভৃতি অঞ্চলে।
• নব্য প্রস্তর যুগ :
এই যুগের স্থায়িত্ব ছিল পরবর্তী ৩০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত। এই যুগের হাতিয়ারগুলি ছিল অনেক বেশি মসৃণ, ধারালো ও ব্যবহার উপযোগী। মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে এবং কৃষিকার্য ও পশুপালন বিদ্যা আয়ত্ত করতে শুরু করে এবং কৃষিকার্য ও পশুপালন বিদ্যা আয়ত্ত করে। কুমোরের চাক আবিষ্কৃত হয়।
ভারতে নব্য প্রস্তর যুগের সংস্কৃতি আবিষ্কৃত হয়েছে কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে দক্ষিণে গোদাবরী নদীর তীর পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায়।
■ তাম্রপ্রস্তর যুগ :
নব্য প্রস্তর যুগের শেষে নানা কাজে ধাতুর ব্যবহার শুরু হয়। তামা ধাতুর ব্যবহারের সূচনা হল । ধাতুর সঙ্গে পাথরের ব্যবহারও অব্যাহত ছিল বলে এই যুগকে তাম্র-প্রস্তর যুগ বলা হয়।
উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে যখন তাম্রপ্রস্তর যুগ অবস্থান করছিল, সেই সময়ে পশ্চিম ভারতের হরপ্পা অঞ্চলে তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগের এক উন্নত নগর সভ্যতার বিকাশ হয়। এই সভ্যতা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতির দ্বারা সৃষ্টি হয়েছিল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন