হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?



ভূমিকা

হরপ্পা সভ্যতা ছিল মূলত নগরকেন্দ্রিক। মহেন-জো-দারো, হরপ্পা, কালিবঙ্গান, লোথাল প্রভৃতি সকল স্থানেই মাটি খুঁড়ে প্রাক-ঐতিহাসিক নগরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। আধুনিক নাগরিক জীবনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা হরপ্পা সভ্যতার যুগেও পাওয়া যায় এটা সত্যিই বিস্ময়কর। নগর পরিকল্পনার মূল বৈশিষ্ট্য : হরপ্পা সভ্যতার নগর নির্মাণ কৌশল শহরবাসীর উন্নত নগর জীবনের পরিচয় দেয়। মহেন-জো-দারো ও হরপ্পায় প্রায় একই ধরনের নগর গড়ে উঠেছিল।

(১) রাজপথ-অট্টালিকা : 


হরপ্পা ও মহেন-জো-দারো নগর দুটিতে সুপ্রশস্ত ও সোজাসুজি প্রসারিত রাজপথ এবং রাজপথের দুধারে ছিল একতলা ও বহুতল অট্টালিকা।

(২) সুবিন্যস্ত গৃহনির্মাণ : 


প্রত্যেক আবাসিক বাড়িতে ছিল কূপ, স্নানাগার ও সামনে ছিল বাগানসহ আঙিনা। সাধারণত পোড়া ইটে বাড়ি তৈরি হত। ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড মন্তব্য করেছেন যে, হরপ্পায় গৃহনির্মাণ সংক্রান্ত আইন-কানুন মেনে চলা হত। বাড়িগুলিতে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা ছিল।

(৩) পয়ঃপ্রণালী : 

বাড়ির নর্দমার জলনিকাশের জন্য রাস্তায় ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী ছিল। ব্যাসাম লিখেছেন যে, রোমান সাম্রাজ্যের যুগের আগে এত ভালো জল নিকাশের ব্যবস্থা আর দেখা যায় না। প্রত্যেক বাড়ির সামনে আবর্জনাকুন্ড থাকত। 

(৪) কুটির : 


নগরগুলিতে সরম্য অট্টালিকার পাশাপাশি কুটিরও ছিল। কুটিরগুলি ছিল শ্রমিকদের আবাসস্থল।

অন্যান্য চারটি বৈশিষ্ট্য :


(১) স্নানাগার


মহেন-জো-দারো মধ্যস্থলে ৩৯ × ২৩ × ৮ মাপবিশিষ্ট জলাধার সমেত একটি বিরাট মাপের স্নানাগার ছিল। জলাধারে জল ঢোকার ও বের হওয়ার ব্যবস্থা ছিল। চারদিকে ছিল ছোটো ছোটো ঘর। মনে হয় স্নানাগারটি ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়।

(২) শস্যাগার : 

হরপ্পায় আবিষ্কৃত বড়ো একটি শস্যাগার এ যুগের উন্নত সভ্যতার আর এক নিদর্শন। শস্যাগারটির আয়তন ছিল ১৫০ ফুট × ২৫০ ফুট। ঐতিহাসিক হুইলার লিখেছেন যে, এত বড়ো শস্যাগার খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের আগে কোথাও দেখা যায়নি। ঐতিহাসিক ব্যাসাম এই শস্যাগারটিকে একটি রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তুলনা করেছেন। 

(৩) দুর্গ : 


মহেন-জো-দারোর পশ্চিমে একটি বিশালায়তন বাড়ি আবিষ্কৃত হয়েছে । ঐতিহাসিকেরা একে দুর্গ মনে করেন। দুর্গ অঞ্চলে ঘর বাড়িও আবিষ্কৃত হয়েছে। সম্ভবত সেগুলি ছিল শাসক শ্রেণির। 

(৪) পৌরসংস্থা : 

মহেন-জো-দারো ও হরপ্পার অধিবাসীরা নাগরিক স্বাস্থ্য সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন, ভূগর্ভস্থ জল নিকাশি ব্যবস্থা তারই উদাহরণ। জল নিকাশি পরিকল্পনা ও বিশাল শস্যাগার দেখে মনে হয় শহরে পৌরসংস্থা ছিল।

■ মন্তব্য : 


হারিয়ে যাওয়া হরপ্পা সভ্যতা বর্তমানে প্রাচীন ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস রচনার উপাদান হিসাবে সাক্ষ্য দিচ্ছে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন