এশিয়ার স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা



ভূমিকা 

স্বাভাবিক বনভূমি প্রকৃতির সাহচর্যে গড়ে ওঠে। এশিয়া মহাদেশ বিশাল। এই মহাদেশের উত্তর-দক্ষিণে অধিকবিস্তার ও অন্যান্য কারণে জলবায়ুগত তারতম্য দেখা যায়। জলবায়ুর তারতম্যে এশিয়া মহাদেশে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বৈচিত্র্য ঘটেছে। এই মহাদেশের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে কতগুলি ভাগে ভাগ করা যায়।

• শ্রেণিবিভাগ :


I. নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য


অবস্থান : ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনস, ভিয়েতনাম, ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমটালে এই বনভূমি দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য ও বৃক্ষ

(i) গাছগুলি যথেষ্ট দীর্ঘ হয়।
(ii) চিরসবুজ প্রকৃতির।
(iii) ঘনসন্নিবিষ্ট থাকে।
(iv) মূল্যবান কাঠের বৃক্ষ জন্মায়।
(v) বনভূমির তলদেশ লতাগুশ্মপূর্ণ থাকায় প্রবেশ করা যায় না।

▪️প্রধান প্রধান বৃক্ষগুলি হল মেহগনি, রোজউড, আয়রন উড, রবার, আবলুস প্রভৃতি।

II. ক্রান্তীয় পর্ণমোচী বনভূমি : 


অবস্থান : ভারত, মায়ানমার, থাই-ল্যান্ড, মালয় উপদ্বীপ, কাম্বোডিয়া, লাওস, দক্ষিণ-পূর্ব চিনে দেখা যায়। 

• বৈশিষ্ট্য ও বৃক্ষ : 

(i) বৃক্ষগুলি মাঝারি উচ্চতার হয়।
(ii) শুষ্ক ঋতুতে গাছের পাতা মোচন ঘটে।
(iii) গাছগুলি বিশেষ ঘনসন্নিবিষ্ট হয় না।

▪️প্রধান বৃক্ষগুলি হল শাল, সেগুন, মহুয়া, পলাশ, শিমুল, শিশু, জারুল, বাঁশ প্রভৃতি।

III. ভূমধ্যসাগরীয় বনভূমি : 


অবস্থান : এশিয়ার পশ্চিম অংশে ভূমধ্যসাগরের তীরে সিরিয়া, লেবানন, ইসরায়েল, তুরস্ক প্রভৃতি দেশে দেখা যায়।

• বৈশিষ্ট্য ও বৃক্ষ :

(i) বৃষ্টিপাত কম ও শীতকালে হলেও চিরসবুজ বনভূমির সৃষ্টি হয়েছে।
(ii) বাষ্পীমোচনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গাছের ছাল যথেষ্ট পুরু এবং পাতায় মোমজাতীয় পদার্থের আস্তরণ থাকে।
(iii) গাছের শিকড় মৃত্তিকার গভীর অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

▪️এই বনভূমির প্রধান বৃক্ষ হল : জারা, কারি, কর্ক, ওক প্রভৃতি।

IV. সরলবর্গীয় বনভূমি : 


অবস্থান : রাশিয়ার উত্তর অংশে পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিশাল অঞ্চলে (তৈগা বনভূমি) এবং চিন ও জাপানের উত্তর অংশে, মধ্যের পার্বত্য অঞ্চলে অধিক উচ্চতায় দেখা যায়।

• বৈশিষ্ট্য ও বৃক্ষ :


(i) গাছগুলি যথেষ্ট দীর্ঘ হয়।
(ii) গাছের পাতাগুলি ছুঁচালো ও কোণ বিশিষ্ট হয়।
(iii) নরম কাঠের গাছ জন্মায়।
(iv) বনভূমির তলদেশ পরিষ্কার থাকায় অভ্যন্তরে প্রবেশ করা যায়। 
(v) একই প্রজাতির গাছ পাশাপাশি থাকে।

▪️এই বনভূমির প্রধান বৃক্ষগুলি হল পাইন, ফার, দেবদারু, স্পুস প্রভৃতি।

V. নাতিশীতোষ্ণ মিশ্র বনভূমি : 


অবস্থান : প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে দক্ষিণ চিন, দক্ষিণ জাপান ও কোরিয়ার কিছু অংশে দেখা যায়।

• বৈশিষ্ট্য ও বৃক্ষ :


(i) পর্ণমোচীবৃক্ষের প্রাধান্য থাকলেও চিরসবুজ গাছও থাকে।
(ii) শক্তকাঠের ও পুরু ছানযুক্ত উদ্ভিদ জন্মায়।
(iii) এই বনভূমি বেশি গভীর হয় না।

▪️এই বনভূমির প্রধান বৃক্ষগুলি হল : বার্চ, ওয়ালনাট, চেস্টনাট, পপলার, এলম প্রভৃতি।

VI. তৃণভূমি :


মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিশেষত কিরঘিজিয়া, কাজাখস্তান, তাজাকিস্তান, উজবেকিস্তান, মঙ্গোলিয়ায় তৃণভূমির সৃষ্টি হয়েছে। মধ্য এশিয়ার তৃণভূমি স্টেপস্ নামে পরিচিত। এই তৃণভূমিতে স্বাভাবিক উদ্ভিদ হিসেবে ছোটো-বড়ো তৃণ জন্মায়।

VII. মরু উদ্ভিদ : 


অবস্থান : মধ্য এশিয়ার গোবি, ভারত ও পাকিস্তানের থর, ও আরব উপদ্বীপের মরুভূমিতে দেখা যায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কম হওয়ায় ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়। মরু উদ্ভিদের পাতা থাকে না। পাতা কাটায় পরিণত হয়। গাছের কাণ্ডেই ক্লোরোফিল থাকে ও খাদ্য তৈরি হয়।

• মনে রাখা দরকার •


◼️এশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম মহাদেশ।

◾এশিয়ার উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ হল মাউন্ট এভারেস্ট (৮৮৫০ মি:)

▪️এশিয়ার উচ্চতম মালভূমি হল পামির মালভূমি ।

◾এশিয়ার বৃহত্তম মালভূমি হল তিব্বত মালভূমি ।

▪️এশিয়ার বৃহত্তম সমভূমি হল উত্তরের সমভূমি।

◼️সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের সমভূমি বিশ্বের বৃহত্তম সঞ্চয়জাত সমভূমি।

◾ইয়াং-সি-কিয়াং এশিয়া মহাদেশের দীর্ঘতম নদী।

▪️ইয়াং-সি-কিয়াং কে বলা হয় স্বর্ণরেণু নদী।

◼️এশিয়া মহাদেশের উত্তরবাহিনী নদীগুলিতে বছরে দুবার বন্যা হয়।

◼️এশিয়া তথা বিশ্বের শীতলতম স্থান হল – ভারখয়ানক্সের ঐমায়কন।

◾এশিয়ার উন্নতম স্থান হল পাকিস্তানের জেকোবাবাদ।

◾এশিয়া মহাদেশের বর্ষণসিক্ত অঞ্চল হল মৌসিনরাম (১৩৯২ সেমি)।

▪️এশিয়া মহাদেশের উত্তরে তৈগা বনভূমির সৃষ্টি হয়েছে।

◾এশিয়ার বৃহত্তম হ্রদ হল ক্যাম্পিয়ান সাগর।

◼️এশিয়ার গভীরতম হ্রদ হল বৈকাল হ্রদ। ভ্যান হ্রদ সর্বাপেক্ষা লবণাক্ত জলের হ্রদ।

◾তুরানের সমভূমি হল নিম্ন সমতলভূমি।

▪️এশিয়ার নিম্নতম স্থান হল মরুসাগর ।

◼️ আমুদরিয়া সিরদরিয়া অন্তর্বাহিনী নদী এবং ইউফ্রেটিস-ট্রাইগ্রিস হল যুগ্মনদী।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন