◼️ অবস্থান :
হলদিয়া শিল্পাঞ্চলটি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হুগলি ও হুগলি নদীর সংগমস্থলে অবস্থান করছে, হলদি নদীর বাম তীরে উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে হুগলি নদী এবং দক্ষিণে হলদি নদী ও পশ্চিমে হিজলি খাল দ্বারা সীমাবদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গের এই নবনির্মিত শিল্পাঞ্চলটির আয়তন প্রায় ৩২৭ বর্গকিলোমিটার। হুগলি শিল্পাঞ্চলের প্রায় ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এই শিল্পাঞ্চলটি অবস্থান করছে।
◼️ হলদিয়া শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার কারণ :
(i) বন্দরের উপস্থিতি :
হলদিয়া শিল্পাঞ্চল হল বন্দরকেন্দ্রিক শিল্পাঞ্চল। কলকাতার পরিপুরক হলদিয়া বন্দর গড়ে ওঠায় প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি সহজে আমদানি এবং শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানি করার সুবিধা হয়েছে।
(ii) জমির সহজ প্রাপ্যতা :
হলদিয়া বন্দর ও শহর হল নবনির্মিত। গ্রামভিত্তিক এই অঞ্চলে শিল্প গঠনের প্রয়োজনীয় জমি খুবই সহজে ও সুলভে পাওয়া যায়। শিল্পের সম্প্রসারণের জন্য ও প্রয়োজনীয় জমি এই নবনির্মিত শিল্পাঞ্চলে পাওয়া যায়।
(iii) কাঁচামাল সরবরাহ :
এই শিল্পাঞ্চলে ব্যবহৃত কাঁচামাল নিকটবর্তী ঝাড়খণ্ডের মালভূমি থেকে এবং খনিজ তেল অন্য স্থান থেকে আমদানি করে নেওয়ার সুবিধা রয়েছে।
(iv) শক্তি সম্পদের জোগান :
রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের অধীন কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ডি. ভি. সি এর অধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শক্তিসম্পদ জোগান দেওয়া হয়। এছাড়া হলদিয়ায় একটি গ্যাস টারবাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
(v) ভূমিরূপ ও জলবায়ু :
অঞ্চলটির নদী গঠিত সমতল ভূমিভাগ এবং সমুদ্র সান্নিধ্যে অবস্থান করায় সমভাবাপন্ন জলবায়ু শিল্প গঠনের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।
(vi) উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা :
প্রথমত, ৪১ নং জাতীয় সড়কের মাধ্যমে অঞ্চলটিকে ৬নং জাতীয় সড়কের (কলকাতা — মুম্বই) সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথের পাঁশকুড়া থেকে হলদিয়া রেলপথ স্থাপিত হয়েছে, তৃতীয়ত, রাজ্য ও জেলা সড়কের মাধ্যমে এবং চতুর্থত, জলপথের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
(vii) সুলভ শ্রমিক :
একদিকে পূর্ব-মেদিনীপুরের স্থানীয় শ্রমিক এবং অন্যদিকে ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা থেকে মানুষ কাজের সন্ধানে আসায় সহজে ও সুলভে শ্রমিক পাওয়া যায়।
(viii) চাহিদা বা বাজার :
এই শিল্পাঞ্চলে উৎপাদিত দ্রব্যের একদিকে যেমন স্থানীয় এলাকায় চাহিদা রয়েছে, অন্যদিকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপক চাহিদা বা বাজার রয়েছে।
(ix) মূলধন বিনিয়োগ :
প্রাথমিক পর্যায়ে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমের মূলধন বিনিয়োগ করেছে। সম্প্রতি বহু শিল্পপতি এবং জাপান সহ শিল্পোন্নত কিছু দেশ মূলধন বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে এসেছে।
(x) সরকারি নীতি :
পিছিয়ে পড়া পূর্ব-মেদিনীপুর জেলার উন্নয়নের জন্য এই অঞ্চলে শিল্প স্থাপনে সরকারি শিল্পনীতি কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে। রাস্তা নির্মাণ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পানীয় জলের ব্যবস্থা, শ্রমিকদের আবাসস্থল নির্মাণ, শিক্ষাকেন্দ্র ও চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে সরকারিভাবে। এই পরিকাঠামো তৈরি হওয়ায় শিল্পস্থাপনের সুবিধা হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন