নীলদর্পণ নাট্যশিল্পের বিচারে উন্নত ট্র্যাজেডি না হলেও ট্র্যাজেডি। অতএব এই নাটকের নায়ক চরিত্রের সন্ধান করতে এসে আমাদের অ্যারিষ্টটলের দ্বারস্থ হতেই হবে। অ্যারিষ্টটল তাঁর 'পোয়েটিকস' গ্রন্থে ট্র্যাজেডির সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন এই আলোচনায় তিনি নায়ক নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যার অবকাশ তৈরি করে নিয়েছেন। অ্যারিষ্টটল স্বীকার করেছেন:
ক. ট্র্যাজেডির নায়ক ধার্মিক হবে না। কারণ ধার্মিক লোকের পতনে ভয় জাগে না, উল্টে লাগে আঘাত যাকে ইংরেজিতে বলে Shoke ।
খ. অতি মন্দ লোকও ট্র্যাজেডির নায়ক হতে পারে না। অতি মন্দ লোক উন্নত অবস্থায় পৌঁছতে পারে না। তাতে নৈতিকতা বোধের পরিতৃপ্তি জাগতে পারে। জাগে ভয় বা শোচনা।
গ. একেবারে ভিলেন (Villain) বা খলচরিত্র ট্র্যাজেডির নায়ক হতে পারে না। ভিলেনের পতনে নৈতিকতা বোধের জয় ঘোষিত হয় ঠিকই। কিন্তু তাতে ভয় বা শোচনা জাগে না।
ঘ. ট্র্যাজেডির নায়ক হবে এমন ব্যক্তি যার অবস্থান থাকবে অবিসংবাদিত ভালো মানুষের সমাজ। তার পতনের জন্য তার পাপ দায়ী নয়, দায়ী তার কিছু ভুলও ত্রুটি। এই ভুল ও ত্রুটির মাধ্যমে নাটকে ঘটবে করুণ পরিণতি।
ঙ. নায়ক হবেন অতি খ্যাতানামা ও ঐশ্বর্যশালী কোন ব্যক্তি। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি হবেন সাধারণ স্তরের থেকে ঊর্ধ্বে।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অ্যারিষ্টটলের নির্দেশ ট্র্যাজেডির নায়ক বিচারে অনুসৃত হয়ে এসেছে। কোনও প্রতিবাদ জাগে নি কোথাও। বর্তমান বিশ শতকে এসে অ্যারিস্টটলের নায়ক নির্দেশের পট ভূমিতে ফাটল ধরেছে। জন. এস. স্মার্ট প্রথম প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি উদাহরণ স্বরূপ বাইবেলের গসপেল কাহিনীর প্রসঙ্গ এনে বলেছেন জোবের কথা। জোব অতিধার্মিক। তাঁর পতনে আঘাতের চেয়ে শোচনাই বেশি জাগে। জোবের জন্য শুধু করুণা নয় শোচনাও জাগে। স্মার্ট এইভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে অ্যারিষ্টটলের বক্তব্য সম্পূর্ণ মান্য নয়। স্মার্ট অবশ্য আরও বলেছেন। নায়ক চরিত্রের পতনে শুধু বিচারের বিভ্রান্তি ও চরিত্রগত ত্রুটি সক্রিয় থাকবে এমন কথা গ্রাহ্য নয়। নিরীহ ও নির্দোষ ব্যক্তির জীবনে বিচার-বিভ্রম ও চারিত্রিক ত্রুটি না থাকা সত্ত্বেও নেমে এসেছে শোচনীয় পরিণাম। তিনি উদাহরণ স্বরূপ 'ট্রোজান উইমেন' নাটকের কথা বলেছেন। এই নাটকের হেকুবা বা এ্যান্ড্রোম্যাকি কোন দোষ ত্রুটি না থাকা সত্ত্বেও অসহনীয় দুঃখ দুর্দশা ভোগ করেছে। এ থেকেই স্মার্ট সিদ্ধান্ত করেছেন, অ্যারিষ্টটলের বক্তব্য সর্বাংশে মানা যায় না। শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথের পতনের জন্য তার চরিত্রের অন্তর্নিহিত উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য ম্যাকবেথ একের পর এক যে হত্যা করে গেছে, সেগুলিতে পাপ কাজই। অতএব পাপীও ট্র্যাজেডির নায়ক হতে পারে।
সবসময়ই যে ট্র্যাজেডির নায়ক হতে গেলে উচ্চবংশ হতে হবে, রাজা বা ঐশ্বর্যবান ঐতিহাসিক ব্যক্তি হতে হবে এমন অ্যারিষ্টটলীয় নির্দেশ বর্তমান বিশ্বে অচল। ট্র্যাজেডির নায়ক হতে পারে অতি সাধারণ ব্যক্তিও। মুখ্যত সমাজ বিবর্তনের ফলে, অ্যারিষ্টটলের নায়ক বিচারের পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে স্মার্ট মন্তব্য করেছেন।
তাহলে দেখা গেল বর্তমানে অখ্যাত দরিদ্র অতি সাধারণ ব্যক্তিও নায়ক হতে পারে। এবার তাহলে আমাদের দৃষ্টি ফেরাতে হবে নীলদর্পণের দিকে। এই নাটকের নায়করূপে আমরা নবীনমাধবকে চিহ্নিত করে এসেছি। তারও কারণ আছে। গ্রাম বাংলায় নীলচাষ নিয়ে নীলকরগণ অসহনীয় পীড়ন দমন চালাচ্ছিল। তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য নবীনমাধবকেই আমরা প্রত্যক্ষভাবে পেয়েছি। অবশ্য একথাও স্বীকার করতে হবে তার নেতৃত্ব বহুক্ষেত্রে যেমন প্রত্যক্ষ নয়, তেমনি নেতৃত্বের সমুন্নত এককত্ত্বও লক্ষ্য করা যায় না। কিন্তু তার নেতৃত্বের যেটুকু পরিচয় পাওয়া গেছে তাই তার নায়ক পদ প্রাপ্তির পক্ষে যথেষ্ট। নীলদর্পণ নাটকে নীলকরদের অত্যাচারে জর্জরিত গ্রাম বাংলার একটি পরিবার হিসেবে
বেছে নেওয়া হয়েছে স্বরপুরের বসু পরিবারকে। এই পরিবারের কর্তা গোলোকচন্দ্র বসু এবং গৃহিণী সাবিত্রী। গোলোকচন্দ্রের দুই পুত্র নবীনমাধব ও বিন্দুমাধব। গোলোকচ একজন নিরীহ সজ্জন। তিনি অধ্যাপকদের কাছে 'কায়স্থকুলতিলক'। তিনি নীলকরদের ব্যাঘ্রের চেয়েও ভয় পান, কোন গোলের মধ্যে থাকেন না। তিনি কখনও কারোর মন্দ করেন না, বা কাউকেও মন্দকর্ম থেকে উদ্ধার করার ভাবনাও ভাবেন না। তাঁর সচ্চরিত্রতার কথা সুবিদিত। কিন্তু এহেন পিতার পুত্র হয়েও নবীনমাধব 'স্বরপুর বৃকোদর' আখ্যা পেয়েছে। গোলোক বসু জানতেন নীলকরদের অত্যাচার থামানো খুবই দুঃসাধ্য। কারণ পুলিশ, দারোগা, দেওয়ান, আমিন, ম্যাজিস্ট্রেট যাবতীয় প্রশাসন তাদের পক্ষে। এমনকি খবরের কাগজ তাদের বিরুদ্ধে লেখে না। এই পরিস্থিতিতে নীলকরদের সঙ্গে একটা ব্যবস্থা করে চলাই শ্রেয়ঃ। পিতার প্রতি শ্রদ্ধাবান হয়েও নবীনমাধব সেই নীলকরদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। প্রতিবাদী হতে গিয়েই নবীনমাধব নিজের জীবনকে বিপন্ন করেছে। গোলোকচন্দ্রের উদ্বন্ধনে মৃত্যুর পর চতুর্থ অঙ্কের দ্বিতীয় গর্ভাঙ্কে ডেপুটি ইন্সপেক্টর নবীনমাধব সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিল, নবীনবাবু অতি বীরপুরুষ, পরোপকারী বদান্য বিদ্যোৎসাহী দেশহিতৈষী কিন্তু নির্দয় নীলকর কুজ্ঝটিকায় নবীনবাবুর সদগুণসমূহ মুকুলেই ম্রিয়মাণ হইল।”
ডেপুটি কত প্রত্যক্ষভাবে নবীনমাধবকে চিনেছিলেন, তা তাঁর মন্তব্য থেকে জানা যাচ্ছে। নবীমাধবের সাহসের কথা উল্লেখ করেছে সাধুচরণ ঘোষ। নীলকরেরা বসু পরিবারের ধানের জমি গ্রাস করেছে, এবার মান ধরে টান দেবার ষড়যন্ত্র আঁটছে। এই পরিস্থিতিতে সাহেবদের কুটিতে গিয়ে নবীনমাধব বোঝাতে চেষ্টা করলে সাহেব বলেছিল, “যদি তুমি আমিন বালাসীর কথা না শোনো আর চিহ্নিত জমিতে নীল চাষ না কর তবে তোমার বাড়ী উঠাইয়ে বেত্রবতীর জলে ফেলাইয়া দিব এবং তোমাকে কুঠির গুদামে ধান খাওয়াইব।” সাহেবদের এই হুংকারে নবীনমাধব ভয় পায় নি। সে সাহেবদের মুখের উপর যে জবাব দিয়েছিল তার উল্লেখ পাই সাধুচরণের মুখে, “আমার গতসনের ৫০ বিঘা নীলের দাম চুকাইয়ে না দিলে এ বৎসর একবিঘাও নীলকরিব না এতে প্রাণ পর্যন্ত পণ, বাড়ী কী ছার।” এমতাবস্থায় নবীনমাধব সিদ্ধান্ত নিয়েছে মকদ্দমা করার। নবীনমাধবের এ সাহসী সিদ্ধান্ত সাহেবদের কাছে তাকে শত্রু করে তুলেছে।
নবীনমাধব বহু অসহায় প্রজার সহায়। গোপীনাথ দেওয়ান মামলাবাজ নবীনমাধবের প্রসঙ্গে জানিয়েছে, “ধর্মাবতার ঐ একজন কুটির প্রধান শত্রু। পলাশপুর জ্বালান কখনই প্ৰমাণ হইত না যদি নবীন বসু ওর ভিতরে না থাকিত। বেটা আপনি দরখাস্তের মুসাবিদ্যা করিয়া দেয়, উকিল মোক্তারদিগের এমন সলাপরামর্শ দিয়াছিল যে তাহার জেরেই হাকিমের রায় ফিরিয়া যায়। এই বেটার কৌশলেই সাবেক দেওয়ানের দুই বৎসরের মেয়াদ হয়।” নবীনমাধব প্রকৃতই গরীব প্রজাদের রক্ষার ব্যাপারে দীক্ষিত। তার প্রজা হিতৈষিতার পরিচয় নানাভাবে পাওয়া গেছে। গোলোকচন্দ্রকে মিথ্যা মামলায় কারাগারের পাঠাবার উদ্যোগ চলছে যখন, তখন স্বরপুর থেকে সপরিবারে পালিয়ে যাবার পরিবর্তে নবীনমাধব সিদ্ধান্ত নিয়েছে—"আমি কতদিকে সান্ত্বনা করিব, সপরিবারে পলায়ন করা বিধি, না, পরোপকার পরম ধর্ম, সহসা পরাজুখ হব না। শ্যামনগরের কোন উপকার করিতে পারিলাম না। চেষ্টার অসাধ্য ক্রিয়া কি, দেখি কি করিতে পারি।” নবীনমাধবকে প্রকৃতই একজন পতিত পাবনের ভূমিকায় নীলদর্পণ নাটকে বারবার দেখা গেছে। অসহায় রাইয়তদের পাশে গিয়ে সে দাঁড়িয়েছে নিজের জীবন বিপন্ন করে। নবীনমাধব যথার্থ পুরুষ সিংহ বললে বাড়িয়ে বলা হবে না।
ক্ষেত্রমণিকে বেগুনবেড়ের কুঠিতে ধরে নিয়ে গেলে রেবতী নবীনমাধবের বাড়িতে প্রতিকারের আশায় ছুটে এলে নবীনমাধব মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে—“পিতার স্বরপুর বৃকোদর জীবিত থাকিতে কুল কামিনী অপহরণ। এই মুহূর্তেই যাইব—কেমন দুঃশাসন দেখিব সতীত্ব শ্বেত উৎপল নীলে মণ্ডুক কখনই বসিতে পারে না।”
প্রথম অঙ্কের প্রথম গর্ভাঙ্কেই আমরা গোলোকচন্দ্রকে নবীনমাধবকে সতর্ক করে দিতে দেখেছি। গোলোক বসু বলেছেন, "সাহেবের সঙ্গে বিবাদ তো সস্তবে না।” তিনি ভালো মতোই জানেন, জলে বাস করে কুমীরের সঙ্গে নিবাস করা সম্ভব নয়। কিন্তু নবীনমাধব পিতার এই সতর্ক বাণীতে পিছপাও হয় নি। সে বারবার ছুটে গেছে, শ্যামনগরের রাইয়তদের বাঁচাতে, লাঞ্ছিতা ক্ষেত্রমণিকে উদ্ধার করতে। স্বয়ং উড সাহেব নবীনমাধবকে বলেছে “গোস্তাকি, তোর দাদনের জন্যে দশখানা গ্রামের দাদন বন্ধ রহিয়াছে।”
দরিদ্র চাষীদের বাঁচাবার জন্য নবীনমাধব সাহেবদের অশ্লীল গালাগাল সহ্য করেছে। সে জানে সাহেবরা নিতান্তই স্বার্থপর অশিক্ষিত এবং অর্থলোলুপ। তাদের বাধা দিতে গেলে, তারা অশ্লীল ও ইতর গালাগাল শোনাবেই। তাতে নবীনমাধব দমিত হয় নি। নবীনমাধবের শারীরিক শক্তি ও সৌন্দর্য অসাধারণ। তার পিতামাতার প্রতি যেমন অটুট শ্রদ্ধা, তেমনি পরিবার পরিজনের জন্য সে স্নেহে কাতর। তার অনেক আশা তার ভাই বিন্দু মাধবের প্রতি। নবীনমাধবের পড়াশুনার কথা জানা না গেলেও সেও বিদ্যানুরাগী। সে চায় তার গ্রামের মানুষ লেখাপড়া শিখুক। তার জন্য সে স্কুল স্থাপন করতে চায়। গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যচিস্তায় সে চিন্তিত। সে গ্রামে হাসপাতাল বানাতে চায়। সে দশগ্রাম মানুষের আশা- ভরসা। এহেন নবীনমাধবকে একদিন চরম দণ্ড মাথা পেতে নিতে হল। পিতৃশ্রাদ্ধকৃত্য তখনও শেষ হয় নি, এমন সময় তার পুকুর পাড়ের জমিতে সাহেবরা নীলচাষ বুনতে এলে সে সাহেবদের কাছে পিতৃশ্রাদ্ধক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার আর্জি নিয়ে গেলে পরিবর্তে সে পেল পদাঘাত। তাতেই নবীনমাধবের আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগল। সেও পাল্টা পদাঘাত করল সাহেবের বুকে। সাহেবরা প্রতিশোধ নেবার জন্য তাকে লাঠি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করল। সেই আঘাতে অচৈতন্য হয়ে যখন নবীনমাধব ভূমিতে পতিত হল তখন তাকে তারা তরোয়ালের আঘাতে চরম মৃত্যু দণ্ড দিল। অথচ ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি ক্ষেত্রমণি উদ্ধারের দৃশ্যে তোরাপকে নবীনমাধব অনুরোধ করেছে সাহেবকে প্রাণে না মারতে। সে বলেছে, "তোরাপ মারবার আবশ্যক কি এরা নির্দয় বলো আমাদের নির্দয় হওয়া উচিত নয়, আমি চলিলাম।” এই উক্তি থেকে বোঝা গেল, নবীনমাধবের ন্যায় ও নীতিবোধ কত প্রথর। তবুও সেই নবীনমাধবকে সাহেবদের হাতেই মৃত্যু বরণ করতে হয়েছে। স্বরপুর বৃকোদর, প্রজা হিতৈষী সাহসী পরোপকারী পতিতপাবন নবীনমাধবের করুণ পরিণতি খুবই শোচনীয় এবং করুণ রসাত্মক। নবীনমাধব যথার্থ ট্র্যাজেডির নায়ক। অ্যারিষ্টটলের ভাষ্যে তাকে নায়ক পদে বসানোর ব্যাপারে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু ট্র্যাজেডির আধুনিক ব্যাখ্যায় নবীনমাধবের নায়ক পদপ্রাপ্তির পথে কোন বাধা নেই। অবশ্য ট্র্যাজেডির সব ঘটনাই প্রত্যক্ষ ক্রিয়ার মাধ্যমেই দেখাতে হয়। নীলদর্পণে নবীনমাধবের সাহস, পরোপকারিতা প্রজাদের পক্ষ নিয়ে লড়া এবং আরো অনেক গুণের কথা আমরা জানতে পারি সাধুচরণের মুখে, গোপীনাথের মুখে, ডেপুটির মুখে এবং সাবিত্রীর মুখে। এর দ্বারা চরিত্রটির প্রত্যক্ষতার অভাব ঘটেছে। এগুলি ট্র্যাজেডির ত্রুটি। কিন্তু নবীনমাধব সাহেবদের মুখের উপর তার প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ক্ষেত্রমণিকে উদ্ধারের জন্য ছুটে গিয়েছিল। সে যে বিদ্যানুরাগী, তার প্রকাশ পেয়েছে ইন্সপেক্টরের সঙ্গে ইস্কুল স্থাপনের বিষয়ে। সে প্রাণভয় তুচ্ছ করে জনবলে বলীয়ান সশস্ত্র সাহেবদের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিল। এও আমরা দেখেছি। তার লড়াই ছিল সীমিত সাধ্য নিয়ে রীতিমত সশস্ত্র সজ্জিত বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে। এইভাবে যে লড়াই করা যায় না, অধিকন্তু জয়লাভ সম্ভব নয়, এই বোধ নবীনমাধবের ছিল না। এই লড়াই-এর মানসিকতার সঙ্গে মিশে আছে হঠকারিতা। এই হঠকারিতা প্রেরণা সে পেয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্র কথিত প্রজাদের প্রতি অতিরিক্ত সহানুভূতি থেকে। সে যেমন তার নিজের পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধ তেমনি দশগ্রামের নিপীড়িত চাষীর প্রতি তার দায়বদ্ধতা কম ছিল না। তার করুণ পরিণতির জন্য দায়ী ঐ দায়বদ্ধতার স্বীকৃতি। এখানে সে দ্বন্দ্বহীন হতে পারে। কিন্তু তার আন্তরিকতা ছিল অসাধারণ। নাট্যকার আশা দিয়ে ভাষা দিয়ে আর ভালবাসা দিয়ে তাঁর মানস নায়কের প্রতিচ্ছবি রূপে এঁকেছেন নবীনমাধবকে। এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দিগ্ধ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন