প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় মুদ্রা ও শিলালিপির গুরুত্ব কী?

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে মুদ্রা ও শিলালিপির গুরুত্ব কী ?


নিঃসন্দেহে ইতিহাসের অন্যতম উপকরণ সাহিত্যগত উপাদান। কিন্তু এই উপাদান যেহেতু প্রত্যক্ষ ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত নয় সেহেতু এই উপাদানগুলি ব্যবহারে যথেষ্ট সতর্কতার প্রয়োজন । পক্ষান্তরে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান হল সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য উপাদান। এই সব উপাদানের সাহায্যেই প্রাচীন ভারতের বহু অজানা দিক আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা, শিলালিপি, মুদ্রা ও স্মৃতিস্তম্ভ।

শিলালিপি সম্পর্কে ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ বলেছেন যে, উপকরণ হিসাবে শিলালিপি হল প্রথমস্থানীয়, এগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্ভরযোগ্য। যেহেতু শিলালিপি কোনো ধাতু, পাথর বা পোড়ামাটির ওপর খোদাই করা হত সেহেতু এগুলির বিকৃতিসাধন সহজসাধ্য নয়। 


◼️ মুদ্রার গুরুত্ব :


প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস রচনার উপাদান হিসাবে মুদ্রা অত্যন্ত নির্ভরশীল ও প্রামাণিক।

প্রথমত, মুদ্রায় উল্লেখিত লেখ থেকে রাজাদের নাম, তাদের বংশ পরিচয় ও সময়কাল জানা যায়।

দ্বিতীয়ত, মুদ্রায় অনেক ক্ষেত্রে রাজাদের বিশেষ গুণাবলি লেখ বা চিত্রের মাধ্যমে খোদিত থাকত। এই লেখ বা চিত্রগুলি শুধু ওই রাজাদের গুণাবলি নয়, ওই সময়কালের সংস্কৃতিগত ধারণাও করা যায়। সমুদ্রগুপ্তের বীণাবাদনরত মুদ্রা সমুদ্রগুপ্তের সংগীতপ্রিয়তার পরিচয় বহন করে।

তৃতীয়ত, মুদ্রায় উল্লেখিত শস্যের খোদাই থেকে ওই সময়কালের কৃষিজাত দ্রব্যের পরিচয় পাওয়া যায়।

চতুর্থত, মুদ্রায় ব্যবহৃত ধাতু থেকে ওই সময় কালের ধাতু ও দেশের খনিজ সম্পদ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। মনে রাখা প্রয়োজন যে পারসিক ও গ্রিক মুদ্রার অনুকরণেই প্রাচীন ভারতে মুদ্রার প্রচলন হয়েছিল। 

■ শিলালিপির গুরুত্ব :


প্রাচীন ইতিহাসের উপাদান হিসাবে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আর প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের মধ্য শিলালিপি বিশেষ গুরুত্ববহ। প্রথমত, পুস্তকগুলিতে বিভিন্ন ঘটনা, রাজাদের ও রাজপরিবারের কার্যাবলি অনেক সময়ে বিকৃত হয়েছে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে অনেক পুস্তকেই প্রাথমিক বিবরণ উধাও হয়ে গেছে। এছাড়া পুস্তকগুলিতে ঘটনার যথার্থতা নয়, অনেক ক্ষেত্রেই লেখকের নিজস্ব চিন্তাধারা প্রতিফলিত হয়েছে, অতিশয়োক্তি দোষে এগুলি দুষ্ট। সেই হিসাবে শিলালিপি ইতিহাসের সত্যতা নির্ণয়ে অনেক বেশি নির্ভরশীল।

দ্বিতীয়ত, শিলালিপির বিভিন্ন লেখমালা থেকে সমসাময়িককালের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায়। কারণ খোদিত লিপিগুলির বিবৃতি পরিবর্তিত হয় না। তৃতীয়ত, অনেক ক্ষেত্রেই প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক রাজ্য ও সেই অঞ্চলের ইতিহাস জানার যথাযথ পুস্তকাবলি বা বিবরণের একান্ত অভাব। সেক্ষেত্রে শিলালিপিগুলি অত্যন্ত নির্ভরশীল। বিশেষ উল্লেখ্য শিলালিপিগুলি হল :

(১) অশোকের শিলালিপি, স্তম্ভলিপি, (২) দ্বিতীয় পুলকেশী ও চালুক্য রাজ্য সম্বন্ধে রবিকীর্তি রচিত আইহোল প্রশস্তি, (৩) গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী সম্বন্ধে নাসিক প্রশস্তি, (৪) কলিঙ্গরাজ খারবেল সম্বন্ধে হাতিগুম্ফা লিপি, (৫) প্রথম সাতকর্ণী সম্বন্ধে মাতা নয়নিকা রচিত নানঘাট লিপি, (৬) সমুদ্রগুপ্ত সম্বন্ধে হরিষেণ বিরচিত এলাহাবাদ প্রশস্তি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন