ইতিহাসের উপাদান কাকে বলে? প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান কী?
যে সকল তথ্য বা সূত্র ইতিহাসের সত্যতা নির্ণয়ে সাহায্য করে তাকে ইতিহাসের উপাদান বলা হয়।
মাটির অভ্যন্তর বা সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে ইতিহাসের যে উপাদান পাওয়া যায়, তাকে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান বলে।
চারটি প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান :
(১) জনবসতির ধ্বংসাবশেষ :
কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরাকীর্তির ধ্বংসাবশেষ আমাদের একমাত্র ঐতিহাসিক উপাদান। যেমন- (i) মহেন-জো-দারো, হরপ্পা, (ii) তক্ষশিলা, (iii) সারনাথ, (iv) নালন্দা, (v) সাঁচি, (vi) অজন্তা-ইলোরার গুহা মন্দির প্রভৃতি।
(২) লিপি বা লেখ :
ঐতিহাসিক জ্ঞানের উপাদান হিসাবে লিপিগুলি খুবই নির্ভরযোগ্য। লিপিগুলি তামা, ব্রোঞ্জ বা পাথরের ওপর খোদাই করা হত। লিপিগুলি থেকে আমরা ভারতীয় রাজাদের রাজ্যজ প্রশস্তি, শাসন, ধর্ম, রাজনৈতিক ঘটনা, ব্যাবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি জানতে পারি। লিপিগুলির মধ্যে অশোকের শিলালিপি সর্বপ্রধান।এছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লিপিগুলি হল-
(i) কলিঙ্গরাজ খারবেলের হাতিগুম্ফা শিলালিপি।
(ii) সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ স্তম্ভলিপি,
(iii) রুদ্রদামনের জুনাগড় লিপি।
(iv) গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর নাসিক প্রশস্তি।
(v) দ্বিতীয় পুলকেশীর আইহোল লিপি প্রভৃতি।
(৩) মুদ্রা :
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় মুদ্রা সাহিত্য ও লিপির সত্যতা যাচাই করতে খুবই সাহায্য করে।
(i) মুদ্রায় দেওয়া সন তারিখ থেকে মুদ্রাগুলির কাল নিরূপণ করতে সাহায্য করে।
(ii) মুদ্রা থেকে রাজাদের শাসন, রাজ্যের আয়তন ও তাদের ধর্ম বিশ্বাস সম্বন্ধে জানা যায়।
(iii) প্রাচীন ভারতের অনেক রাজার অস্তিত্ব শুধুমাত্র মুদ্রা থেকেই জানা গেছে।
(iv) মুদ্রায় ব্যবহৃত ধাতু থেকে সে যুগের রাজনৈতিক অবস্থা জানা যায়।
বৈদিক যুগে নিষ্ক ও মনা নামে স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন ছিল জানা যায়। বর্তমান ধারাবাহিকতায় পারসিকরাই ভারতে মুদ্রার প্রচলন করে। এই প্রসঙ্গে সমুদ্রগুপ্তের বীণাবাদনরত মুদ্রা, কুষাণ মুদ্রা প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়।
(৪) স্থাপত্য-ভাস্কর্য :
এই উপাদানটি প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন সময়ের সংস্কৃতি ও শিল্পের গুণগত উৎকর্ষ উন্মোচন করে। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের বহু প্রাচীন মন্দির, স্মৃতিস্তম্ভ এর নিদর্শন। সাঁচি, সারনাথ-এর স্থাপত্য-ভাস্কর্য ও অজন্তা-ইলোরার গুহাচিত্র তুলনাহীন। খননকাজের ফলে পশ্চিমবঙ্গের বেড়াচাপা ও বোলপুরের নিকটে ভাস্কর্য শিল্পের বহু নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন