■ হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসের কারণ :
আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হরপ্পা সভ্যতা ধ্বংস হয়। ধ্বংসের কারণ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদের অন্ত নেই। এই সভ্যতার ধ্বংসের নিশ্চিত কারণ এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি, সবই অনুমান মাত্র।
(১) মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা :
বিভিন্ন নগরে জনস্ফীতির ফলে জনসংখ্যা ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছিল। না। সেই সঙ্গে ব্যাবসা-বাণিজ্যে ভাটা পড়ে ও আর্থিক কাঠামো ক্রমেই ভেঙে পড়ে।
(২) জলবায়ুর পরিবর্তন :
অনেকে মনে করেন যে, কালক্রমে জলবায়ুর পরির্তন ঘটায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায়। এর ফলে ভূত্বকের উপরিভাগে ভূগর্ভস্থ লবণ উঠে আসে ও স্থানটি মরুভূমিতে পর্যবসিত হয়।
(৩) যথেচ্ছ বৃক্ষচ্ছেদন :
কারও কারও মতে, পোড়া ইটের ব্যাপক ব্যবহার ও অন্যান্য কারণে এখানে বেহিসাবি বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে অঞ্চলটি ক্রমে বনশূন্য হয়ে পড়ে। ফলে বৃষ্টিপাতের অভাবে কৃষিকার্য বিপর্যস্ত হয়, অধিবাসীরা স্থান ত্যাগে বাধ্য হয়।
(৪) বন্যা :
এক শ্রেণির ঐতিহাসিকেরা বলেছেন, বারংবার সিন্ধু নদের বন্যার ফলেই সভ্যতাটি ধ্বংস হয়। মহেন-জো-দারো নগরটির একাধিকবার বন্যা কবিলত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। “প্লাবনই সিন্ধু (হরপ্পা) সভ্যতাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল।"
(৫) ভূমিকম্প :
আরেকটি মতবাদের বক্তব্য, এই সভ্যতা ধ্বংসের জন্য দায়ী ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড এবং মহামারির মিলিত আঘাত ।
(৬) সিন্ধুনদের গতির পরিবর্তন :
অনেকের মতে আবার সিন্ধুনদের গতিপথ পরিবর্তনের ফলে অঞ্চলটি পরিত্যক্ত হয়।
(৭) স্থবিরতা :
এই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান অবক্ষয়ের মূলে ছিল। স্থবিরতা। কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই সংস্কৃতির কোনো পরিবর্তন না ঘটায় অন্যান্য প্রগতিশীল সংস্কৃতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হরপ্পা সভ্যতা টিকে থাকতে পারেনি।
(৮) নাগরিক আদর্শের অবক্ষয় :
নগর কর্তৃপক্ষের অপদার্থতা ও নাগরিক আদর্শের অবনতি আর একটা বড়ো কারণ হতে পারে। খননকার্যের সময় ওপরের স্তরগুলিতে দেখা যায় শহরের রাস্তা দখল করে বাড়ি তৈরি হচ্ছে, নর্দমা বুজে আসছে, গলির মধ্যে ইটের পাঁজা ; কিন্তু এর প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এগুলিই হল একটি সভ্যতা ধ্বংস হওয়ার অভিমুখে প্রথম পদক্ষেপ।
(৯) বৈদেশিক আক্রমণ :
অনেকের মতে, মহেন-জো-দারো ও হরপ্পায় ব্যাপক দুর্নীতি দেখা দেওয়ার ফলে হরপ্পা সভ্যতা চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়, আর ঠিক সেই সময়ে পশ্চিম দিক থেকে বিদেশি হানাদারদের অতর্কিত আক্রমণে এই সভ্যতা ধ্বংস হয়। হরপ্পা সভ্যতায় প্রাপ্ত মৃতদেহের কঙ্কালে অস্ত্রাঘাত প্রমাণিত হওয়ায় এই ধারণা বদ্ধমূল হয়। সম্ভবত এই হানাদাররা ছিল আর্য জাতি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন