নব্য বা আধুনিক ভারতীয় আর্য ভাষার (NIA) সাধারণ বৈশিষ্ট্য:
মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষা থেকে জন্ম নেওয়া যে সব আঞ্চলিক ভাষা বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেয় এবং আজও নানা ভাবে বর্তমান, সে গুলোই নব্য বা আধুনিক ভারতীয় আর্য ভাষা। যেমন—বাংলা, অসমীয়া, ওড়িয়া প্রভৃতি। এদের জন্ম হয়েছে প্রাকৃত বা অপভ্রংশ বা অবহট্ঠ থেকে। এদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বাদ দিয়ে সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষেপে এই রকম :
•ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য :
১. নব্য ভারতীয় আর্য ভাষায় পদান্তের স্বরধ্বনি লুপ্ত অথবা বিকৃত হয়েছে। মিহির > মিহির, রাম > রাম্।
২. যুগ্ম ব্যঞ্জন একক ব্যঞ্জনে পরিণত—সং নৃত্য > প্রা নাচ্চ > বাং নাচ্, হস্ত > হখ > হাত।
৩. যুক্ত ব্যঞ্জনের ঠিক পূর্বের নাসিক্যধ্বনি ক্ষীণ হয়ে নাসিক্য করে দেয়। পঞ্চ >পাঁচ, দন্ত > দাঁত।
৪. ক্ষেত্র বিশেষে পদ মধ্যস্থিত ‘ইঅ, উঅ’ যথাক্রমে 'ই' এবং ‘উ’—ঘৃত > ঘিঅ > ঘি।
৫. বহু বিদেশী শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং নতুন শব্দ সৃষ্টি করেছে।
•রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য :
১. মারাঠী, গুজরাটি ব্যতীত অন্য ভাষায় ক্লীবলিঙ্গ লুপ্ত।
২. শব্দ রূপের বিচারে কারক মাত্র দুটি। মুখ্য ও গৌণ কারক।
৩. বিভক্তি অনুযায়ী কারক নির্দেশ লুপ্ত এবং বিভক্তির স্থলে অনুসর্গজাত পদ বা পদাংশ যুক্ত।
৪. ক্রিয়াপদের সরলীকরণ হয়েছে।
৫. ‘য়' শ্ৰুতি ‘ব’ শ্ৰুতি বা শ্রুতিধ্বনির প্রচলন ঘটেছে।
৬. বাক্য গঠনে বিচিত্র পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়।
৭. NIA-তে ছন্দোরীতি হল মাত্রামূলক ও সমমাত্রিক। অধিকাংশই অন্ত্যানুপ্রাস । তবে অতি আধুনিক কালে গদ্য ছন্দের প্রচারে সমমাত্রিক অনুপ্রাস প্রায় অচল। বাংলায় অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত তিনটি রীতির ছন্দ ছাড়াও রয়েছে অমিত্রাক্ষর, গৈরিশ, মুক্তক বা বলাকা প্রভৃতি ছন্দোবদ্ধ।
বর্তমানেও নব্য ভারতীয় আর্য ভাষাগুলো সার্বিকভাবে নানা বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছে স্ব-স্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবার সাধারণ লক্ষণগুলোও অনুসরণ করে চলেছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন