•মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার (MIA) ভাষাতাত্ত্বিক বিশেষত্ব বা বৈশিষ্ট্য :
মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার স্থিতিকাল খ্রিস্টপূর্ব ৬০০-১০০০ খ্রিস্টাব্দ। 'প্রকৃতি' থেকে জন্ম বলেই এই স্তরের নাম প্রাকৃত। এছাড়া এই স্তরে পালি, অপভ্রংশ (অবহট্ঠ) ভাষাস্তরও ছিল। এই স্তরটি আঞ্চলিক উপভাষার মতো। এদের পৃথক অস্তিত্ব, বৈশিষ্ট্য যেমন আছে, তেমনি ভাষাতত্ত্ববিদরা কতকগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্যও উল্লেখ করেছেন। এই সুত্রে মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষেপে আলোচিত হল-
•ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:
১. প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার দুটি অর্ধ ব্যঞ্জন এই স্তরে লোপ পেল। '৯' লুপ্ত হলেও 'ঋ' নানাভাবে পরিবর্তিত হয়ে রয়ে গেল।
২. ঐ > এ, ঔ > ও একক ধ্বনিতে পরিণত হল।
৩. পদাদি যুক্ত ব্যঞ্জনের একটি লোপ পেয়েছে। আর মধ্য যুক্ত ব্যঞ্জনে সমীভবন লক্ষিত হয়। যেমন—আত্মা > আত্তা।
৪. পদান্তের বিসর্গ কখনো কখনো এ বা ও। জনঃ > জনে, জনঃ > জনো। কখনো বা লুপ্ত জনঃ > জন, মুনিঃ > মুনি।
৫. পদান্তে স/ন জাত অনুস্বার ব্যতীত অন্য সব ব্যঞ্জন লুপ্ত—নরান > নরা, পুত্রাত্ > পুত্তা।
৬. মাগধী প্রাকৃতে শুধু 'শ'-এর ব্যবহার, অন্য প্রাকৃতে 'স' দেখা যায়।
৭. যুক্ত ব্যঞ্জন সমীভূত হয়ে যুগ্ম ব্যঞ্জনে পরিণত। কার্য > কজ্জু, লঘু > লহু।
৮. ট ও প বর্গে ১ম, ২য় বর্ণ > ৩য়, ৪র্থ বর্ণে পরিণত। পঠতি > পঢ়ই, কলাপ > কলাব (অঘোষ > সঘোষ)।
★ রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য :
১. পূর্বের তিনটি বচনের দ্বিবচন মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষায় লোপ পেয়েছে। দ্বিবচনের স্থলে বহুবচনের ব্যবহার হয়েছে।
২. এ যাবৎ দৃশ্য বিশেষ্য সর্বনাম পদের প্রভেদ লুপ্ত হয়েছে এই স্তরে।
৩. পাঁচটি ভাবের অভিপ্রায় ও নির্বন্ধ লুপ্ত হয়ে প্রাকৃতে তিনটি ভাব রইল।
৪. পাঁচটি কালের দুটি লোপ পেল (লুট, লুপ্ত)।
৫. অধিকাংশ বিভক্তি লুপ্ত হয়ে বিভিন্ন শব্দকে অনুসর্গ রূপে ব্যবহার দেখা যায়।
৬. এই স্তরে শব্দের শেষে ব্যঞ্জন লোপের ফলে প্রথমা ও দ্বিতীয়া বিভক্তির বহুবচনে পুংলিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গ ভেদ রইল না।
৭. ধাতুরূপে আত্মনেপদ লুপ্ত হয়েছে। সর্বত্র পরস্মৈপদের ব্যবহার।
৮. পদ গঠন মূলত নামমূলক।
৯. কর্তা, কর্ম ব্যতিরেকে কারকে বিভক্তির জন্য বিশেষ বিশেষ শব্দের ব্যবহার শুরু হল। এভাবেই প্রত্যয়ের ব্যবহার ও অনুসর্গের প্রথম প্রচলন দেখা গেল।
১০. অক্ষর ভিত্তিক অক্ষর মূলক ছন্দ মাত্রা মূলক হতে থাকল। মাত্রা নির্ণয় দেখা গেল অক্ষর উচ্চারণের কাল অনুসারে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন