পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু
• ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থান করছে। তাই পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু উষ্ণ ক্রান্তীয় প্রকৃতির হয়েছে। মৌসুমি বায়ু নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ু হল প্রকৃতপক্ষে উন্ন ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রভৃতির।
• বৈশিষ্ট্য :
পশ্চিমঙ্গের জলবায়ুর কতকগুলি বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে উল্লেখ্য। যেমন-
(i) মৌসুমি বায়ু প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুতে প্রধানত গ্রীষ্ম ও শীত ঋতু লক্ষ্য করা যায়।
(ii) গ্রীষ্ম ঋতুর স্থায়িত্বকাল বেশি হয়।
(iii) গ্রীষ্ম ঋতুতে দক্ষিণের সমুদ্র সংলগ্ন অঞ্চলে সমভাবাপন্ন ও উত্তর অংশের উষ্ণতা নাতিশীতোয় প্রকৃতির (উচ্চতা বেশি হওয়ায়) এবং কর্কটীয় বা মধ্যভাগের উন্নতা কিছুটা প্রকট হয়। মধ্যভাগে বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলা, বর্ধমান ও নদিয়া জেলার কিছু অংশে উন্নতা ৪০° সেন্টিগ্রেডের বেশি হয়।
(iv) গ্রীষ্মের শেষে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমিবায়ুর প্রভাবে (জুন-সেপ্টেম্বর মাসে) বৃষ্টিপাত ঘটে।
(v) বর্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৭৫ সেমি হলেও উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে প্রায় ৪০০-৪৫০ সেমি বৃষ্টিপাত ঘটে। দক্ষিণে এবং পশ্চিমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে। সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয় পুরুলিয়া জেলায়, ১২৫ সেমি বা তার কম।
(vi) গ্রীষ্ম ঋতুতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সাইক্লোনের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে ঝড় ও বৃষ্টিপাত ঘটে। একে কালবৈশাখি বলা হয়।
(vii) শীত ঋতুতে শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রথমত, পশ্চিমবঙ্গের উন্নতা হ্রাস পায় এবং দ্বিতীয়ত বৃষ্টিপাত ঘটে না। এই সময়ে পার্বত্য অঞ্চলের গড় উন্নতা ১-২ সেন্টিগ্রেড হয়। কিছু কিছু সময় দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত ঘটে।
(viii) শরৎ ঋতুতে ঘূর্ণবাত জনিত কারণে সামান্য ঝাড় ও বৃষ্টিপাত ঘটে, একে বলা হয় আশ্বিনের ঝড়।
• পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রকসমূহ :
কতকগুলি প্রাকৃতিক পরিবেশ পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যেমন—
(i) অক্ষাংশ : পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণবঙ্গের প্রায় মাঝবরাবর কর্কটক্রান্তিরেখা বিস্তৃত থাকায় গ্রীষ্মকালীন উন্নতার পরিমাণ যথেষ্ট বেশি হয়।
(ii) উচ্চতা : উচ্চতা বৃদ্ধি ঘটলে উষ্ণতা আনুপাতিক হারে (৬.৪°C /১০০০ মিটার) কমে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে পার্বত্য অঞ্চলের উচ্চতা বেশি হওয়ায় গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা মনোরম (১৮°C-২২°C) প্রকৃতির এবং শীতকালীন উষ্ণতা খুবই কম (গড়ে ১°C/২°C) হয়।
(iii) মৌসুমি বায়ুর প্রভাব : মৌসুমি বায়ু প্রবাহ পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। গ্রীষ্মকালীন আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। আবার শীতকালীন শীতল ও শুষ্ক মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের উদ্ভূতা হ্রাস পায় এবং বৃষ্টিপাত ঘটে না।
(iv) সমুদ্রের প্রভাব : পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে রয়েছ বঙ্গোপসাগর। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশের জলবায়ুতে সমুদ্রের প্রভাব কার্যকরী হওয়ায় জলবায়ু কিছুটা সমভাবাপন্ন প্রকৃতির হয়েছে।
(v) হিমালয় পর্বত : পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে হিমালয় পর্বত অবস্থান করছে। এই পর্বত পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করছে। গ্রীষ্মকালে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে বাধা দিয়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। আবার শীতকালে শীতল উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুকে বাধা দিয়ে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গকে প্রবল শৈত্যের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে।
(vi) অন্যান্য এছাড়াও ভূপৃষ্ঠ গঠনকারী শিলা ও মৃত্তিকা, বনভূমি, ভূমির ঢাল প্রভৃতি কারণগুলিও পশ্চিমবঙ্গের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন