কানা হরিদত্ত ও তাঁর কাব্য | Kana Haridatta and His Manasa Mangal Kavya

মনসামঙ্গল কাব্যের আদি কাব্যকার সম্ভবত কানা হরিদত্ত। বিজয়গুপ্তের 'মনসামঙ্গল' বা 'পদ্মাপুরাণ' কাব্যে পাওয়া যায় – 

"মূর্খে রচিত গীত না জানে মাহাত্ম্য।

প্রথমে রচিল গীত কানা হরিদত্ত।।

হরিদত্তের যত গীত লুপ্ত হইল কালে।

ঘোড়া গাঁথা নাহি কিছু ভাবে মোরে হলে।।

বিজয়গুপ্ত ছাড়া পুরুষোত্তম নামক একজন গায়েনের রচনায়ও পাওয়া যায় --

"কানা হরিদত্ত     হরির কিঙ্কর

         মনসা হউক সহায়।

 তার অনুবন্ধ     লাচাড়ির ছন্দ

         শ্রীপুরুষোত্তম গায়।।

বিজয়গুপ্তের জীবৎ-কাল-সম্বন্ধে যে সকল প্রমাণ হস্তগত হয়েছে, তাতে তাঁকে চৈতন্য- পূর্ববর্তী কবি বলেই বিশ্বাস করা যায়। অতএব বিষয়গুপ্তের কালেই যদি হরি দত্তের গীত লুপ্ত হ'য়ে থাকে, তবে তিনি যে বিজয় গুপ্ত অপেক্ষাও অন্তত শতাব্দীকাল পূর্বে বর্তমান ছিলেন, তাতে সন্দেহের কোন কারণ থাকতে পারে না। অসম্ভব নয়, হরিদত্ত হয়তো আদি- মধ্যযুগেরও পূর্ববর্তী যুগসন্ধিকালে বর্তমান থেকে তাঁর 'গীত রচনা করেছিলেন—কিন্তু এটিও অনুমান মাত্র। বিজয়গুপ্ত যদিও উল্লেখ করেছেন যে হরিদত্তের গীত সমস্ত লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল, তা' সম্ভবত সত্য নয়। কারণ সাম্প্রতিক কালেও 'হরিদত্ত' ভণিতাযুক্ত কিছু কিছু রচনার সন্ধান পাওয়া যায়। হরিদত্তের রচনার অংশবিশেষ মাত্র পাওয়া যায় বলেই তাঁর কাব্যের পরিচয় দান সম্ভব নয়। তবে প্রাপ্ত অংশ থেকে অন্তত অনুমান করা চলে যে, কানা হরিদত্ত যেমন মূর্খ ছিলেন না, তেমনি তাঁর রচনায় যে ষোড়াগাঁথা কিছুই ছিল না, এই অপবাদও মিথ্যা। ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্যের মতে 'দাস হরিদত্ত'-ভণিতাযুক্ত “কালিকামঙ্গল' পুথির গ্রন্থকার হরিদত্তের পাণ্ডিত্য সম্বন্ধেও সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না। হরিদত্তের ভণিতাযুক্ত সকল রচনাই ময়মনসিংহ জেলায় পাওয়া গিয়েছে বলে, অন্য কোন প্রবলতর প্রমাণের অভাবে, এই সিদ্ধান্তই করতে হয় যে, হরিদত্ত ময়মনসিংহ জেলার অধিবাসী ছিলেন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন