বিদেশী শব্দেও কোথাও কোথাও সংস্কৃত শব্দের অনুকরণে 'ণ' লেখা হয়। যদিও এই ক্ষেত্রেও 'ন' লেখাই উচিত। যেমন - কোরাণ (পুরাণ অনুসরণে), কোরান (<কুর-আন্ বা কোর্- আন), দূরবীণ-দূরবীন, তুরাণ-ইরান, মর্ম্মাণ-নর্ম্মাণ-নর্মান ইত্যাদি। তবে সংস্কৃত শব্দে যেখানে 'ণ' আছে সেখানে মূর্ধন্য 'ণ'-ই লেখা উচিত।
সংস্কৃতের দন্ত্য 'ন' এর মূর্ধন্য 'ণ'-তে পরিবর্তনের নিয়মই হল ণত্ব-বিধান। বাংলা বানানে বিশেষত তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হয়। যেমন -
১. ট বর্গের পূর্বে অবস্থিত 'ন' > 'ণ' হয়। যেমন - কণ্টক, চণ্ড, দণ্ড, অবগুণ্ঠন ইত্যাদি।
২. ঋ, র, ষ- এর পরে 'ন' > 'ণ' হয়। যেমন - ঋণ, ঘৃণা, কৃষ্ণ, বর্ণ, বিষ্ণু, পূর্ণ প্রভৃতি।
৩. একই শব্দ বা পদের মধ্যে ঋ, র, ষ এবং পরে স্বরবর্ন 'ক' বর্গ, 'প' বর্গ, য, র, হ এবং অনুস্বারের ব্যবধানের পর 'ন' থাকলে 'ণ' হয়ে যায়। যেমন - দর্পণ, শ্রবণ, রেণু, লক্ষণ, কৃপণ ইত্যাদি।
৪. দুটি পদ মিলে একটি হলে 'হ' ও 'ত' এর নিয়ম কার্যকরী হয় না। যেমন- দুর্নাম (দূর+নাম), হরিনাম, ত্রিনয়ন, বারিনিধি, তাম্রনখ। তবে এক পদ রূপে বিবেচ্য হলে 'ন' > 'ণ' হয়। যেমন - সূর্পণখা, অগ্রহায়ণ ইত্যাদি।
৫. প্র, পরা, পরি, নির্- এই চারটি উপসর্গের অন্তর শব্দের পরে 'ন' > 'ণ' হয়। যেমন- নমে কিন্তু প্রণমে, নীত-প্রণীত, নতি-পরিণতি, নিপাত-প্রণিপাত ইত্যাদি।
এছাড়া ণত্ব-বিধানের অন্যান্য নিয়মগুলো বাংলা ভাষায় তেমন ভাবে প্রয়োজনীয় নয়। যেমন- আহ্নিক, সায়াহ্ন, মধ্যাহ্ন-তে 'ন' এবং প্রাহ্ন, পরাহ্ন, পূর্বাহ্ন-তে 'ণ' হয়। আবার প্রকাশন, পরিগমন, আগমন-এ 'ণ' হয় না। আম্রবন, ইক্ষুবন প্রভৃতি বাংলা বানানে লেখা হয়, (নিয়মের বিপরীতে) যা বাংলা ভাষায় সিদ্ধ। বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রেও ণত্ব-বিধানের নিয়ম প্রযোজ্য হয় না।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন