রাক্ষস-খোক্কস ও দৈত্য-দানো কাদের বলা হয়? | Who are Rakshas-Khokkas and Daitya-Dano?

সবদেশেরই লোকসাহিত্যে কিছু অতিপ্রাকৃত বিশেষ চরিত্র থেকেই থাকে। রাক্ষস-খোক্কস, ভূত-পেত্নী, দৈত্য দানো ছাড়াও পরীদেরও এই বিশেষ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

রাক্ষস কারা?
  • লোকসাহিত্যে যেসব রাক্ষসাদির সাক্ষাত আমরা পাই তারা কখনোই রামায়ণে বর্ণিত রাক্ষস নয়। ধর্মীয় গ্রন্থের অসুর বা যজ্ঞ নাশকারী মানুষখেকো রাক্ষসেরা চরিত্রে পৃথক। অবশ্য রাক্ষসেরা যে নরমাংসাশী সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। লেম্যান বলেছেন যে, আদিম মানুষের মৃত্যু ভয় থেকেই রাক্ষসাদির সৃষ্টি। অন্য মতে স্বপ্ন জগতেই এদের সৃষ্টি হয়েছে। আসলে এই ভয়কে দাঁড়িয়েই মানুষ অসাধ্য সাধনের যে ইচ্ছা পোষণ করত তার মধ্য দিয়েই রাক্ষস খোক্ষসের গল্প জন্ম নিয়েছে। নানা বিপদ অতিক্রম করে তার স্বপ্নের রাজকন্যাকে অধিকারের ইচ্ছা মানুষের খুবই প্রাচীন। অনেক সময় এইসব অসামাজিক চরিত্রের সহায়তা পাবার আকাঙ্ক্ষাও যেমন লোকসাহিত্যে দেখা যায়, তেমন দুষ্ট দমনের ইচ্ছা বা সত্য প্রতিষ্ঠার কাজে এদের সহযোগিতা প্রার্থনাও পাশাপাশি চলে এসেছে।
 
দৈত্য বা দানো কারা?
  • এই প্রসঙ্গে দৈত্য ও দানা বা দানোর কথাও আলোচনা করা যেতে পারে। দৈত্য বা দানব লোকসাহিত্যে যে বিশেষত্ব নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে, তাতে তাদেরকে পৌরাণিক দানবদের সমগোত্রীয় বলে মনে হয় না। ইংরেজিতে যাকে ডেভিল বা ডেমন বলা হয়, এমনকি বাইবেলের Satan বাংলা লোকসাহিত্যের দৈত্যি নয় বা দানো নয়। পুরাণের অসুরের সঙ্গে হয়তো একটু মিল থাকতে পারে। বিশাল বিকৃত অথচ ভয়াবহ একটা আসুরিক শক্তির কল্পনা থেকেই দৈত্যি দানোর জন্ম। দিদির পুত্র দৈত্য এবং সেলফিশ জায়েন্টের দৈত্য একই ঐতিহ্যের সন্তান নয়। বরং আফ্রিদি দৈত্য বা আলাদিনের প্রদীপ এর দৈত্যের সঙ্গে এদের কিছুটা মিল থাকা সম্ভব। দানব শব্দটি থেকেই দানা বা দানোর জন্ম। তবে মা ঠাকুমাদের মুখের দানো চরিত্রের সঙ্গে ভূত চরিত্রের কোথায় একটা সংযোগ যেন অনুমান করা যায়। অবশ্য একথা স্মরণযোগ্য যে ভূতের সঙ্গে রাক্ষস বা দানবদের একটা মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ভূত সর্বদাই অদৃশ্য থাকে কদাচিৎ ছদ্মবেশ গ্রহণ করে। কিন্তু রাক্ষস সব সময় প্রত্যক্ষগোচর। অমিতশক্তির অধিকারী অথচ কুৎসিত আকৃতিসম্পন্ন রাক্ষস ভুতের সঙ্গে আদৌ তুলনীয় নয়। অনার্য জাতির অবাঞ্ছিত আচরণকেই রাক্ষস চরিত্রে রূপান্তরিত করা হয়েছে কি?

  • রাক্ষস-খোক্ষস দৈত্য-দানো নিয়ে বহু লোককথা পৃথিবীর সর্বত্র প্রচারিত। গ্রীক বা রোমীয় পুরানে একচক্ষু বীভৎস আকারের দানবের কথা আমরা পড়েছি। সিনোটার নামে যে দৈত্যকে থিসিয়ুস হত্যা করেছিলেন তার রূপ ছিল ভয়াবহ। মেডুসাও ভয়ংকরী। গ্রীক হেকেটি দেবী ত্রিমুণ্ড। এইসব ভয়াবহতার সঙ্গে আরও একটি লোকচেতনা বিশ্বজুড়ে বর্তমান, তা হল ভূত-প্রেত সম্পর্কে দীর্ঘকাল ধরে নানা বিচিত্র ধারণা লোকসাহিত্যে নানা উপকরণ যুগিয়ে এসেছে। তবে বাংলার ভূতের গল্পের সঙ্গে ইংরেজি 'হ্যাপি টেলস্' জাতীয় রচনার অনেক পার্থক্য আছে। এগুলিকে আবার কোনক্রমেই ব্যাপকজাত বলা চলে না।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন