ধর্মসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ ধর্মমঙ্গল কাব্য। ধর্মমঙ্গল কাহিনীতে ধর্মের মাহাত্ম্য বর্ণিত হলেও এর প্রধান আকর্ষণ এর কাহিনী। কাহিনীতে বৈচিত্র্য যেমন আছে, তেমনি আছে বিস্তৃতি। সোমঘোষের পুত্র ইছাই ঘোষ পার্বতীর অনুগ্রহে গৌড়েশ্বরের সামন্তরাজ ত্রিষষ্ঠিগড়ের কর্ণসেনকে পরাজিত করে নিজে সিংহাসনারোহণ করেন। এই যুদ্ধে কর্ণসেনের ছয়পুত্রই নিহত হয়েছিলেন, সেই শোকে কর্ণসেনপত্নীও দেহত্যাগ করেন।
গৌড়েশ্বর কর্ণসেনের প্রতি সহানুভূতিবশতঃ তাঁর সঙ্গে আপন শ্যালিকা রঞ্জাবতীর বিবাহ দিলেন। কিন্তু এতে রাজ শ্যালক এবং রাজার পাত্র মহামদ অতিশয় রুষ্ট হলেন। গৌড়েশ্বর কর্ণসেন- রঞ্জাবতীকে ময়নাপুরে পাঠিয়ে দিলেন। রঞ্জাবতী 'শালেভর' দিয়ে ধর্মঠাকুরের অনুগ্রহে এক পুত্র লাভ করেন, পুত্রের নাম হলো লাউসেন। তার খেলার সাথীরূপে ধর্ম রঞ্জাবতীকে কর্পূরসেন নামে আর একটি পুত্র দান করেন। হনুমান এদের দু'জনকে অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা দান করেন। এদিকে মহামদ কর্ণসেন বা রঞ্জাবতীর কিছু করতে না পেরে লাউসেনের অনিষ্ট করবার জন্য চেষ্টা করতে লাগলেন।
কর্পূরসেনকে সঙ্গে নিয়ে লাউসেন গৌড়যাত্রা করেছেন, এবং চরিত্রবলে পার্বতীকে সন্তুষ্ট করে জয়খড়গ লাভ করলেন। পথে কামদল বাঘ এবং কুম্ভীরকে হত্যা করে এবং গণিকার ছলনাকে ব্যর্থ করে লাউসেন গৌড়ে পৌঁছলেন। কিন্তু মহামদের চক্রান্তে তিনি সেখানে বন্দী হলেও ধর্মের অনুগ্রহে আবার মুক্তিলাভ করলেন। এর পর মহামদের প্ররোচনায় গৌড়েশ্বর লাউসেনকে কামরূপবিজয় অভিযানে পাঠালেন। লাউসেন কালুডোমের সহায়তায় কামরূপ-যুদ্ধে জয়লাভ করলেন এবং রাজকন্যা কলিঙ্গাকে বিবাহ করলেন। এর পর লৌহগণ্ডারের শিরচ্ছেদ করে লাউসেন সিমুলের রাজকন্যা কানাড়াকেও বিবাহ করেন। এইবার মহামদ লাউসেনকে পাঠালেন পিতৃশত্ৰু ইছাই ঘোষকে দমন করবার জন্য।
ইছাই ঘোষ ছিলেন দেবীর কৃপাপুষ্ট। কিন্তু ধর্মঠাকুরের কৃপায় লাউসেন ইছাই ঘোষকেও পরাজিত এবং নিহত করলেন। এই সময় গৌড়েশ্বরের রাজ্যে পাপ দেখা দিলে পাপ দূরীকরণের জন্য মহামদের পরামর্শে রাজা লাউসেনকে আদেশ করলেন। লাউসেন তখন পশ্চিমে সূর্যোদয় ঘটাবার জন্য হাকন্দ গমন করেন এবং দুশ্চর তপস্যায়ও ধর্মকে সন্তুষ্ট করতে না পেরে অবশেষে নিজ দেহ নবখণ্ডে বিভক্ত করে আহুতি প্রদান করলে ধর্মঠাকুর সন্তুষ্ট হয়ে পশ্চিমে সূর্যোদয় ঘটালেন। এদিকে লাউসেনের অনুপস্থিতির সুযোগে মহামদ লাউসেনের রাজ্য বিনষ্ট করলেন। কিন্তু লাউসেন ধর্মের কৃপায় আবার সকলকে বাঁচিয়ে তুললেন এবং রাজ্যও ফিরে পেলেন। মহামদ পাপের ফলে কুষ্ঠরোগাক্রান্ত হয়েও ধর্মের কৃপায় রক্ষা পেলেন, শুধু চিহ্ন রয়ে গেল। লাউসেনও কিছুদিন রাজত্ব করবার পর পুত্র চিত্রসেনের হাতে রাজ্যভার দিয়ে স্বর্গে গমন করলেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন