পোস্টগুলি

জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

জাতিসংঘের ব্যর্থতার কারণ

ছবি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসলীলা বিশ্ব সভ্যতার সংকট সৃষ্টি করেছিল। বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রচেষ্টার জন্য জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় (২৮শে এপ্রিল, ১৯১৯ খ্রিঃ)। জাতিসংঘের সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতাই ছিল বেশি। জাতিসংঘের ব্যর্থতার মূলে বহুবিধ কারণ ছিল। • ভার্সাই চুক্তির ত্রুটি: পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভার্সাই সন্ধি ছিল জার্মানির প্রতি প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা। জার্মানি ভার্সাই সন্ধিকে কোনোক্রমেই মেনে নিতে পারেনি। অন্যদিকে আমেরিকা, রাশিয়া বা অন্য কিছু রাষ্ট্রও ভার্সাই সন্ধির শর্তগুলি মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি। জাতিসংঘের চুক্তিপত্রটি ভার্সাই সন্ধির অঙ্গীভূত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই কারণে এই রাষ্ট্রগুলি জাতিসংঘের ভাবধারাকে প্রথম থেকেই সুনজরে দেখেনি। • অস্পষ্ট ধারণা: বিশ্বের নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ গঠিত হয়। কিন্তু জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সংগঠকরা কোনো সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি। প্রতিষ্ঠানটি ছিল সদস্যরাষ্ট্রদের প্রয়োজন সাপেক্ষ কিন্তু আন্তরিকতাহীন। প্রতিষ্ঠানটির রক্ষণাবেক্ষণ বা ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁদের চিন্তা ছিল না। • সাময়িক সমাধান: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মারণযজ্ঞে মিত্রশক্তি বা অক্ষশ...

বাঙালি সংস্কৃতির স্বরূপ ও বিকাশ

ছবি
আচার্য সুনীতিকুমার বিচার করে দেখিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ও ভোট-জাতীয় লোকেদের সঙ্গে উত্তর ভারত ও বিহারের আর্যভাষাভাষী ঔপনিবেশকদের অর্থাৎ আর্যদের সমভাষিত্বে মিশ্রিত হবার পরই বাঙালী একটি nation বা জাতিরূপে গড়ে ওঠে। অতএব বাঙালী জাতির সংস্কৃতি বল্লে এই ভিন্ন প্রজাতির মিশ্রিত সংস্কৃতিকেই বোঝায়। কিন্তু বাঙলাদেশে এক এক সময় এক একটি জাতি এসে বসবাস করবার ফলে তাদের প্রত্যেকের সংস্কৃতি প্রথমে স্বতন্ত্রভাবে এবং পর্যায়ক্রমে মিশ্রিতভাবে রূপ থেকে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে সংমিশ্রিত হতে হতে যখন চারিটি ভিন্নজাতির সমীকরণের ফলে এক অভিন্ন জাতি-রূপে পরিণত হলো, তখনই তা 'বাঙালী সংস্কৃতি' রূপে পরিচিত হবার যোগ্যতা অর্জন করলো। কাজেই বাঙালী জাতির উদ্ভবকাল-রূপে যদি খ্রীঃ অষ্টম শতাব্দীকে ধরে নেওয়া যায়, তবে তার উৎস-রূপে পাওয়া যাচ্ছে, পৃথক পৃথক ও সম্মিলিতভাবে অস্ট্রিক বা কোল-সাঁওতাল জাতি, দ্রাবিড় জাতি, ভোট-চীন এবং আর্যভাষী জাতির যে ধারাগুলি বাঙলাদেশে এসে এক জাতিত্বে পরিণত হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের স্বকীয় সংস্কৃতি এবং মিলিত সংস্কৃতিকেই। সেই বাঙালী সংস্কৃতি জড় নয়। প্রাগার্যরা বাঙলার বুকে যে সংস্কৃত...

অভিধান বিজ্ঞান (Lexicography)

ছবি
  আধুনিক ভাষা বিজ্ঞানে শব্দার্থ তত্ত্বে শব্দের কাল, সময়, পরিবেশগত কারণে অর্থের নানা ভিন্নতা আলোচিত হয়। এছাড়া অভিধান বিজ্ঞান, লিপি বিজ্ঞান, শিল্প বিজ্ঞান, উপভাষা বিজ্ঞানের আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। অভিধান বিজ্ঞান ভাষা বিজ্ঞানের একটি সমৃদ্ধ শাখা। এখানে অভিধান রচনার বৈজ্ঞানিক রীতি-পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। বর্তমানে শব্দার্থ নয়, প্রয়োগ ব্যুৎপত্তি, পদ পরিচয় ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় অভিধান রচনায় স্থান পেয়েছে। কোনো শব্দের প্রতিশব্দ কি কি, ঐ শব্দের ব্যুৎপত্তি কিরূপ, তা জানা যায় অভিধান থেকে। বস্তুত ভাষার ধ্বনিগত ও অর্থগত দিকের সংযোগ রক্ষা করে অভিধান। বহু প্রাচীন কাল থেকেই প্রায় সব দেশেই অভিধান রচনার প্রবণতা লক্ষিত হয়। যা পরবর্তীকালে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে রচনার উদ্দেশ্যে ভাষা বিজ্ঞানীরা উদ্যোগী হয়েছেন। ফল স্বরূপ বর্তমানে শব্দের উচ্চারণবিধি, প্রসঙ্গ অনুসারে অর্থের পরিবর্তন, আঞ্চলিক তথা উপভাষাগত উচ্চারণ ও অর্থ পার্থক্য অভিধান থেকে পাওয়া যায়। একসময় অভিধান বিজ্ঞানকে ভাষা বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে বিবেচনা করা হত না। কিন্তু এখন এটি একটি সংযোগমূলক শাখা হিসেবে আধুনিক ভাষা বিজ্ঞানে স্বীকৃতি পেয়েছে। জার্মান ভাষায়...

সেন যুগের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের গুরুত্ব আলোচনা [জ্ঞানমূলক]

ছবি
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন একটি দেশের শাসন কাঠামোর প্রতিচ্ছবি। জনজীবনের মাপকাঠি, অর্থনৈতিক ভারসাম্য, শাসকদের সদিচ্ছার প্রতিফলন পড়ে ওই সময়ের জীবনযাত্রার প্রণালী ও তার বিভিন্ন অনুষঙ্গের ওপর। পাল-সেন যুগ বাংলার ইতিহাসে নতুন গতি আনে। শশাঙ্কের সাম্রাজ্যস্থাপনের কৃতিত্ব থাকলেও বাঙালি জাতির মনীষার বিকাশ হয় পাল-সেন যুগ থেকে। পাল যুগের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে যে উদারতা সৃষ্টি হয়েছিল সেন যুগে তা আরও প্রসারিত হয়। আর সেন যুগ থেকেই বর্তমান বাঙালিয়ানার সূত্রপাত। • ধর্মঃ পাল যুগে বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মের প্লাবনের পর সেন যুগে পৌরাণিক ধর্ম প্রবল হয়। জোয়ারের পর ভাটার মতোই সেই যুগে বাংলায় বৌদ্ধ ধর্ম স্তিমিত হয়ে আসে। অবশ্য এর বড়ো কারণ ছিল সেন রাজাদের পৌরাণিক ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা। সেন যুগে বিঘ্ন, শিব, পার্বতীর পূজা শুরু হয়, বহু মন্দিরও তৈরি হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবিষ্কৃত মূর্তিগুলি থেকে মনে হয় সে সময়ে বৈয়ব ধর্মের প্রাধান্য বেশি ছিল। অন্যান্য দেবতার মধ্যে কার্তিকেয় ছিল উল্লেখযোগ্য। • বর্ণভিত্তিক সমাজ: এই যুগে ব্রাহ্মণ্য সংস্কারের বর্ণভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ব্রাহ্মণভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় ব্রাহ্মণদের...

শশাঙ্কের কৃতিত্ব আলোচনা কর [জ্ঞানমূলক]

ছবি
গু প্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকে হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সময় পর্যন্ত উত্তর ভারতে যে রাজনৈতিক শূন্যতা ও অস্থিরতা বিরাজ করছিল, সেই সময় অসামান্য প্রতিভা নিয়ে শশাঙ্ক বাংলাদেশে আবির্ভূত হন। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, শশাঙ্কই বাংলার প্রথম সার্বভৌম রাজা ছিলেন। তাঁর আবির্ভাব সততই বাঙালি জাতির গর্বের বস্তু। বাঙালির উত্থান পর্ব শুরু হয় শশাঙ্কের আমল থেকে। স্বল্পকালীন রাজত্বে তিনি দীপ্তি বিকিরণ করে ধূমকেতুর মতো বিলীন হয়ে যান। ■ ঐতিহাসিক উপকরণ: বাণভট্টের হর্ষচরিত ও হিউয়েন সাঙের বিবরণ থেকে শশাঙ্কের রাজত্বকাল সম্বন্ধে জানা যায়। ■ রাজ্যলাভ: সম্ভবত প্রথম জীবনে তিনি মগধ ও গৌড়ের অধিপতি গুপ্তবংশীয় মহাসেনগুপ্তের অধীনে এক সামন্ত ছিলেন। কনৌজে মৌখরী ও দাক্ষিণাত্যের চালুক্য রাজাদের ক্রমাগত আক্রমণের ফলে বাংলার গুপ্তবংশীয় রাজারা দুর্বল হয়ে পড়ে, সেই সুযোগে শশাঙ্ক বাংলার গৌড় অঞ্চলে এক স্বাধীন রাজা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর রাজধানী ছিল মুরশিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণে (কালোসোনায়)। ■ রাজ্যবিস্তার: স্বল্পকালের মধ্যে তিনি রাজ্য বিস্তারে উদ্যোগী হন। উত্তর ভারতের উদীয়মান শক্তিগুলির সঙ্গে তাঁর সংঘর্ষ শুরু হয়। তাঁর পররা...