পোস্টগুলি

ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণগুলি বর্ণনা করো। এর ফলাফল কী হয়েছিল? (জ্ঞানমূলক)

ছবি
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ কেন ব্যর্থ হয়েছিল? [মাঃ পঃ ১৯৮৭] কারণ: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ বিরাট রকমভাবে শুরু হলেও আশাতীত কম সময়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। অন্যান্য ব্যর্থ প্রয়াসের মতো এই বিদ্রোহের ব্যর্থতার নানা কারণ ছিল: প্রথমত, সংহতির অভাব: মহাবিদ্রোহ একই সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়নি। বিদ্রোহীদের মধ্যে সংহতি ও যোগাযোগের অভাব ছিল। কানপুর, মিরাট, লখনউ প্রভৃতি স্থানে বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থলগুলিতে যোগাযোগ ও সংহতির অভাব ছিল। ফলে একস্থানের বিদ্রোহীরা অন্যস্থানের বিদ্রোহীদের কর্মপদ্ধতি সম্বন্ধে অজ্ঞ ছিল। এক স্থানে যখন বিদ্রোহ আরম্ভ হয়েছে, অন্যস্থানে তখন বিদ্রোহ শুরু হয়নি অথবা বিদ্রোহ অবদমিত হয়েছে। সংহতি ও যোগাযোগের অভাবই ছিল এই বিদ্রোহের ব্যর্থতার প্রধান কারণ। দ্বিতীয়ত, নেতৃত্বের অভাব: যোগ্য নেতৃত্ব যে-কোনো বিদ্রোহ বা সংগ্রামকে সাফল্য লাভ করায়। এই বিদ্রোহে সর্বভারতীয় স্তরে কোনো নেতা ছিলেন না। নানা সাহেব, কুনওয়ার সিং, রানি লক্ষ্মীবাঈ সকলেই ব্যক্তিগত স্বার্থে এই বিদ্রোহে শামিল হন। সর্বভারতীয় স্তরে নেতৃত্ব দেবার যোগ্যতাও তাঁদের ছিল না। বিদ্রোহীদের অযোগ্যতা ও ভুলের পূর্ণ সুযোগ ইংরেজ সেনাপতি স্...

মহাবিদ্রোহের কারণ ও প্রকৃতি আলোচনা করো। (জ্ঞানমূলক)

ছবি
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছিল শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের দ্বারা। কিন্তুইংরেজ বিতাড়নের উদ্যোগ শুরু হয়েছিল তারও অনেক আগে, তথাকথিত অশিক্ষিত আদিবাসী, কৃষক ও অতিসাধারণ চাকুরিজীবী নীচুতলার সিপাহিদের দ্বারা। ইংরেজ বিতাড়নের প্রচেষ্টায় সিপাহিদের আত্মত্যাগ খুবই প্রশংসনীয়। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় প্রভৃতি নানা কারণেই সিপাহিরা ইংরেজ বিরোধী মহাবিদ্রোহে শামিল হয়। ■ মহাবিদ্রোহের কারণ: প্রথমত, সিপাহিদের লাঞ্ছনা: কোম্পানির শাসনের সুযোগে শ্বেতকায় ইংরেজরা ভারতীয়দের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করত। সাধারণ কারণে ঊর্ধ্বতন ইংরেজ সামরিক কর্মচারীরা অধস্তন ভারতীয় সিপাহিদের চরম লাঞ্ছিত করত। দ্বিতীয়ত, শাসননীতি: ব্রিটিশ শাসন নীতির দ্বারা ভারতীয়দের সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়েছিল। তৃতীয়ত, কৃষক শোষণ: সরকারের বিভিন্ন ধরনের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার আসল উদ্দেশ্য ছিল কৃষককে শোষণ করে জমি থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা। চতুর্থত, দুর্বিষহ জীবন: আর্থিক দৈন্যদশা সাধারণ জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই দুর্ভিক্ষ হত, সরকার কোনো প্রতিকার করত না। পঞ্চমত, অধীনতা নীতি: লর্ড ওয়েলেসলির রাজ...

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও বিদ্রোহের বিবরণ দাও। [জ্ঞানমূলক প্রশ্ন]

ছবি
পূর্ব কথা: ভারতের প্রাচীনতম আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়। বিহারের ছোটোনাগপুরের বিস্তীর্ণ অরণ্যাঞ্চলে এদের বাস। এরা ছিল স্বাভাবিকভাবে সরল, অনাড়ম্বর কিন্তু পরিশ্রমী। অরণ্য পরিবেশে শান্তিপ্রিয় সাঁওতালরা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের হাত থেকে কিন্তু রেহাই পেল না। জমিদারদের অত্যাচার, শোষণ এবং মাত্রাতিরিক্ত কর ধার্যে তারা জমিহারা হল। বাধ্য হয়ে তারা মানভূম, ধলভূম, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, মালদহ, ভাগলপুর অঞ্চলে নতুন বসতি স্থাপন করে। জঙ্গল পরিষ্কার করে চাষ করে দামিন-ই-কোহ্ (করমুক্ত পাহাড়ের প্রান্তদেশ)-তে প্রাণের স্পন্দন জাগিয়ে তোলে। কিন্তু কিছুকালের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিল। অসন্তোষ ধূমায়িত হয়ে তা বিদ্রোহের রূপ নেয়। ■ সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ: প্রথমত, ভূমিকর: কিছুকাল পরে ওড়িয়া, বিহারি ও বাঙালি জমিদাররা এই জমিতে চড়া হারে কর আরোপ করে। জমিদাররা মাঝে মাঝে খেয়ালখুশি মতো কর বৃদ্ধি করত। কর দিতে না পারলে তাদের জমি থেকে উৎখাত করত। জমিদারদের অত্যাচার ও নির্দয় ব্যবহার ছিল সাঁওতাল বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কারণ। দ্বিতীয়ত, মহাজনদের চড়া সুদ:  জমিদারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাঁওতালরা মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদ...

ওয়াহাবি আন্দোলনের বিবরণ দাও। [জ্ঞানমূলক রচনাধর্মী প্রশ্ন]

ছবি
'ওয়াহাবি' কথার অর্থ নব জাগরণ। আরব দেশে আবদুল ওয়াহব (১৭৫৩-৮৭) নামে এক ধর্মপ্রাণ মুসলিম ধর্মে এক সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন। তাঁর অনুগামীরা ওয়াহাবি নামে পরিচিত। • নেতৃত্ব ও আন্দোলন: ওয়ালিউল্লাহ: উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা করেন দিল্লির মুসলিম সাধু শাহ ওয়ালিউল্লাহ এবং তাঁর পুত্র আজিজ। প্রথমদিকে ভারতে এই আন্দোলন ছিল নিছকই ইসলামের শুদ্ধি আন্দোলন। সৈয়দ আহম্মদ: রায়বেরিলির সৈয়দ আহম্মদ ওয়াহাবি আন্দোলনকে একাধারে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত করেন। মক্কায় 'হজ' করতে গিয়ে তিনি আরবদেশের ওয়াহাবি আন্দোলনের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হন। তিনি নতুন কলেবরে ভারতে এই আন্দোলন শুরু করেন। এদেশীয় ইংরেজদের তিনি শত্রু বলে চিহ্নিত করেন। ইংরেজ অধিকৃত ভারতকে তিনি দার-উল-হারব (বিধর্মীর দেশ) বলে মনে করতেন। ভারতের অমুসলমান শাসকদের বিরুদ্ধে তিনি ধর্মযুদ্ধ ঘোষণা করেন। নিজেদের শক্তিকে সুসংহত করার জন্য তিনি ও তাঁর অনুগামীদের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও আফগানিস্তানে আশ্রয় নেন। স্থানীয় উপজাতিদের মধ্য থেকে ধর্মযুদ্ধের স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করেন। মূলত ব্রিটিশবিরোধী হলেও সৈ...

ফরাজি আন্দোলনের বিবরণ দাও। [জ্ঞানমূলক প্রশ্ন]

ছবি
ভারতে ইংরেজদের শাসনব্যবস্থায় বহু সম্ভ্রান্ত মুসলিম রাজকর্মচারী কর্মচ্যুত হয়। নতুন ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থায় অনেক মুসলিম জমিদার জমিদারি হারায়। নবাবের ক্ষমতা লুপ্ত হওয়ায় বহু কর্মচারী বেকার হয়। বিলাতি বস্ত্রের আমদানির ফলে অনেক তাঁতির রুজি-রোজগার বন্ধ হয়। এছাড়া নতুন জমিদারদের শোষণ, নীলকরদের অত্যাচার, নায়েব-গোমস্তাদের দরিদ্র কৃষকদের ওপর অত্যাচার-সবকিছু মিলিয়ে মুসলিম কৃষকদের কট্টর ইংরেজ বিরোধী করে তোলে। সঙ্গে যুক্ত হল ধর্মরক্ষার বাতাবরণ। এরই বহিঃপ্রকাশ ফরাজি ও ওয়াহাবি আন্দোলন। উনিশ শতকে বাংলায় এই আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছিল। ধর্মীয় আন্দোলন হিসাবে শুরু হলেও আন্দোলন দুটি রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়। ■ বৈশিষ্ট্য :  (১) আন্দোলন দুটির নেতৃত্বে ছিল মুসলিম নতুন ধর্মীয় গোষ্ঠী।  (২) উভয় আন্দোলনই বহিরাগত বৃহত্তর ধর্মীয় আন্দোলন থেকে প্রেরণা লাভ করে। (৩) আন্দোলন মূলত কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ■ ফরাজি আন্দোলন: ফরাজি কথার অর্থ 'ইসলাম নির্দেশিত কর্তব্য'। নেতৃত্ব ও আন্দোলন: বাংলার কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে ফরাজি আন্দোলন এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ইসলামের পবিত্রতা রক্ষার সঙ্গে কৃষক সম...