পোস্টগুলি

ডিসেম্বর, ২০২৩ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

কাব্য নির্মাণ কৌশলের কয়টি ভাগ ও কী কী? এই ভাগগুলির বিস্তারিত পরিচয়

ছবি
কাব্য নির্মাণ কৌশলের কয়টি ভাগ ও কী কী? কাব্য নির্মাণ কৌশলের তিনটি ভাগ। এগুলি হল-  ১. বিভাব  ২. অনুভাব  ৩. সঞ্চারীভাব কাব্যের রস নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এদের ভূমিকা অপরিহার্য। তাই রস সম্পর্কে স্বাভাবিক ভাবেই এই ভাবগুলির পরিচয় দেওয়া হয়।  আচার্য ভরত তার নাট্যশাস্ত্র গ্রন্থে বলেছেন - বিভাব, অনুভাব ও সঞ্চারীভাবের সংযোগেই রস নিষ্পত্তি ঘটে। কবিরা কাব্যের যে মায়া জগৎ সৃষ্টি করে তার কৌশলটা হল এই বিভাব, অনুভাব ও সঞ্চারীভাব। আলংকারিকরা বোঝাতে চেয়েছেন যে এই তিনটি ভাবই রসের নিষ্পত্তি ঘটায়।  বিভাব: লৌকিক জগতে যা রতি প্রভৃতিভাবের উদ্বোধক, কাব্যে বা নাটকে তাকেই বলে বিভাব। উদাহরণ হিসেবে কাব্য জিজ্ঞাসায় বলা হয়েছে লৌকিক জগতে সীতা ও তাঁর রূপ, গুন, রামের মনে রতি, হর্ষ প্রভৃতি ভাবের উদ্বোধনের কারণ। সেটাই যখন কাব্যে ও নাটকে পরিবেশিত হয় তাকেই বিভাব বলে। আরও পরিষ্কার করে বললে বলা যায় যে কোনো সুন্দর ফুল দেখলে আমাদের মনে আনন্দের সঞ্চার হয়, কারোর মৃত্যু দেখলে আমরা শোকার্ত হই। মনের এই ভাবগুলো সম্পূর্ণভাবেই বাইরের বস্তুর উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ বাহ্যিক কোনো কারণ সামাজিকের চ...

মধুসূদন দত্তের বীরাঙ্গনা কাব্যের নামকরণের সার্থকতা বিচার

ছবি
বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম সার্থক পত্রকাব্য হল বীরাঙ্গনা কাব্য। এগারোটি কাব্যিক পত্রে সমৃদ্ধ এই কাব্যের মূল বিষয় পৃথক পৃথক নায়িকার তাদের প্রিয় নায়কের কাছে বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ কাজের জন্য অনুরোধ করে অথবা অভিমান প্রকাশ করে পত্র প্রেরণ। বীরাঙ্গনা শব্দের সাধারণ অর্থ হল বীর রমণী। ফলে ব্যাকরণগত দিক থেকে এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে সমালোচকেরা এর নামকরণ বিষয়ে যেসব মন্তব্য করেছেন তা খুবই সংগত। মূল আলোচনা: সাধারণভাবে বীর অর্থে আমরা যা বুঝি তা হল অসম সাহসী লড়াকু মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি, যিনি অনায়াসে যুদ্ধযাত্রা করতে পারেন। কিংবা সমকালীন কোনো কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে পারেন। কিন্তু মধুসূদনের বীরাঙ্গনা কাব্যে একমাত্র জনা কিংবা মেঘনাদবধ কাব্যের প্রমীলা ছাড়া আর কোনো নায়িকার মধ্যে সেই পরিমাণ বীরত্ব দেখা যায় না। তবুও অন্যান্য নায়িকাকেউ বীরাঙ্গনা বলা হল কেন, এই প্রশ্ন কিন্তু এসেই যায়।  ওভিদ যেমন কাব্যের দিক থেকেও মধুসূদনকে প্রভাবিত করেছিলেন, ঠিক তেমনই নামকরণের বিষয়টিও তাকে প্রভাবিত করেছিল। বিশেষ করে heroin শব্দটি কবিকে, কবির ভাবনাকে আচ্ছন্ন করেছিল। নায়িকারা ...

বাংলা ভাষার উদ্ভবের ইতিহাস আলোচনা

ছবি
ভাষা নদীর প্রবাহের মতোই গতিশীল এবং নিয়ত পরিবর্তনশীল। এই পরিবর্তনের জন্যই এক ভাষা পরবর্তী কালে এক বা একাধিক ভিন্ন ভাষায় পরিণত হয়। তবে পরিবর্তনশীল হলেও তার ধ্বনিগত ও রূপগত পার্থক্য হয়ে চলে নিরন্তর। স্বল্প সময়ের মধ্যে সেটা বোঝা না গেলেও দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে তা বোঝা যায়। ভাষায় এরকম পরিবর্তন ঘটে বলেই এক ভাষা থেকে একাধিক ভাষার জন্ম হয়। ভাষার ইতিহাসবিদগন ১২ টি আদি ভাষা বংশের অস্তিত্ব অনুমান করতে পেরেছেন। এই ভাষা বংশগুলির অন্যতম হলো ইন্দো-ইউরোপীয় বা আর্য ভাষা বংশ। এই ভাষা বংশ থেকে জাত ইউরোপ ও এশিয়ার বহু আধুনিক ভাষা এখন উৎকৃষ্ট ভাষা হিসেবেই গণ্য হয়। এই ভাষা বংশের প্রাচীন ভাষা হল সংস্কৃত, গ্রীক, লাতিন ইত্যাদি। তাই আর্য ভাষা বংশই হলো বাংলা ভাষার আদি উৎস। তবে আর্য ভাষার ঠিক পরবর্তী ধাপই বাংলা ভাষা নয়। মধ্যবর্তী অনেকগুলি স্তরের মধ্যদিয়ে বিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষা জন্ম লাভ করেছে। বাংলা ভাষার উদ্ভব অষ্টম শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে। খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ সালের কাছাকাছি সময়ে আর্যরা যে ভাষা মুখে নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিল, সেই ভাষা মানুষের মুখে মুখে পরিবর্তিত হয়ে খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০ সালের...

বাক্যগঠনের তিনটি সূত্র কী কী? সহজ আলোচনা

ছবি
বাক্য গঠনের নিয়ম বা লক্ষণীয় বিষয় : বাক্য গঠনে প্রথমেই দুটো বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হয় — (১) বাক্যে যুক্ত পদের ক্রম এবং (২) প্রযুক্ত পদসমূহের মিল বা সঙ্গতি। এছাড়া আরও তিনটি বিষয়ের—যথাক্রমে বাক্যে পদের অবস্থান, ক্রম, পারস্পরিক সঙ্গতি নির্ভর করে। অর্থাৎ বাক্য গঠনের প্রধান তিনটি শর্ত হল- (ক) আকাঙ্ক্ষা, (খ) যোগ্যতা, (গ) আসত্তি। (ক) আকাঙ্ক্ষা (Expectancy) : কোনো উক্তি বা বাক্যের উদ্দেশ্য গ্রহণে শ্রোতার আগ্রহ বা আকাঙ্ক্ষা থাকে। এই আকাঙ্ক্ষা যতক্ষণ না মেটে বা যতক্ষণ অর্থপূর্ণ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বাক্যে অন্য পদের প্রয়োজন থাকে। বাক্যের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ীই পদের অবস্থান হয়। কোথাও পূর্বে সংশ্লিষ্ট বাক্যের সঙ্গে সঙ্গতি থাকাতে একটি পদেই বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ হয়। তবে সাধারণত শুধু উদ্দেশ্য বা বিধেয় দিয়ে তাদের আংশিক পূর্ণতার মাধ্যমে আকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণ হয় না, অন্য পদেরও প্রয়োজন হয়। যেমন: সে বাড়ি গিয়ে এটুকু বললে অর্থ পূর্ণ হয় না, বা আকাঙ্ক্ষা নিবৃত্ত হয় না। "ঘরে পড়তে বসবে'— বসালেই অর্থ সম্পূর্ণ হয়। আবার 'কর্ণকে বধ করে অর্জুন বক্রাসুরকে বধ করার পর ইন্দ্র যেমন, তে...

"সংস্কৃত বাংলা ভাষার জননী" - সহজ ব্যাখ্যা

ছবি
সংস্কৃত ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার সম্পর্ক : যে কোনো ভাষা মাত্রেরই একটা অতীত ঐতিহ্যের অনুসন্ধান করা দুরূহ নয়। প্রায় সহস্র বর্ষের বাংলা ভাষার ইতিহাস বা ঐতিহ্য সূত্র বেশ প্রাচীন। ভাষাতাত্ত্বিকগণ প্রমাণ করেছেন বাংলা ভাষার মূল পৃথিবীর প্রধান ভাষাগোষ্ঠীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভাষাগোষ্ঠী ইন্দো ইউরোপীয়র কাল মোটামুটি ভাবে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০-২০০০ অব্দ। এই ভাষাগোষ্ঠীর অন্যতম শাখা ইন্দো-ইরানীয় গোষ্ঠী। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০-১৫০০ অব্দে ইন্দো-ইরানীয় থেকে ইন্দো বা আর্য শাখা স্বতন্ত্র ভাবে ভারতে (পরবর্তীকালের দেশ') চলে আসে। সিন্ধু নদীর তীরবর্তী সমভূমি অঞ্চলে আর্য ভাষাভাষীরা কখনো সাময়িক ভাবে, পরে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করে। এদের মুখের ভাষা ৬০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ নাগাদ পরিবর্তিত হয়ে যায়। এদেশে ব্যবহৃত বৈদিক ভাষার পরিবর্তন ঘটার সময় থেকে বিস্তীর্ণ এলাকায় এই জনগোষ্ঠী ছড়িয়ে পড়ে, ক্রমশ ভাষা ও আঞ্চলিক উপভাষিক রূপ নেয়; ভাষার ব্যবহারেই দেখা দেয় বিভিন্ন ধ্বনিগত ও ব্যাকরণগত পরিবর্তন। বস্তুত বৈদিক ভাষায় বিকৃতির উপর ভিত্তি করে তক্ষশিলা অঞ্চলের মনীষী ব্যাকরণবিদ পাণিনি তাঁর ব্যাকরণ "অষ্টাধ্...