পোস্টগুলি

অক্টোবর, ২০২৩ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মধ্যযুগের মন ও মানুষ - নন্দগোপাল সেনগুপ্ত

ছবি
  মধ্যযুগের মন ও মানুষ উনিশ শতকে ইংরেজশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের দেশে যে নূতন শিক্ষাদীক্ষা প্রবর্তিত হয়েছিল, তার ফলে যে নূতন জীবন ও মননধারা আত্মপ্রকাশ করেছিল, তাকে রেনেসাঁস বা নবজাগরণ নাম দিয়েছেন অনেকেই। তা এক ধরনের জাগরণ ঠিকই, কিন্তু ইউরোপীয় রেনেসাঁসের সঙ্গে তার একটি মূলগত পার্থক্য আছে। ইউরোপের মানুষ সামন্তযুগের অশিক্ষা-কুশিক্ষায় যে পুরোনো গ্রিকো-রোমক সংস্কৃতির উত্তরাধিকার হারিয়ে ফেলেছিল, তাকেই নূতন করে আবিষ্কার করেন এবং তা-ই তাঁদের মধ্যে জাগায় বৈজ্ঞানিক সন্ধিৎসা ও ঐতিহাসিক বস্তুবোধ, আর এ-দুটোকে আশ্রয় করেই মানুষ নূতনভাবে তৈরি করে নেন তাঁর সংস্কৃতি—যা আসলে তাঁদের পুরুষানুক্রমিক সংস্কৃতিরই নূতন অনুবৃত্তি। কিন্তু ভারতবর্ষ উনিশ শতকে যে সংস্কৃতিকে পেল, তা হল বাইরের জিনিস এবং তা বস্তুত ভারতীয় জীবন ও মননের সঙ্গে কোনোরকমেই সম্পর্কিত নয় এবং আধুনিক শিক্ষাপ্রাপ্ত শহুরেদের বাইরে গোটা দেশের অন্তর্লোককে তা স্পর্শও করল না। ফলে সর্বতোভাবে নূতন একটা জীবনচেতনায় মূর্ত হল না তা। দেশের বৃহৎ একটা শ্রেণি রইলেন নিষ্ঠার সঙ্গে পুরোনোকে আঁকড়ে, আরও একটা শ্রেণি সমস্ত পুরোনো মূল্যমান খুইয়ে ঐতিহ্যভ...

বাংলা লোকসাহিত্যে ইতিহাসচেতনা - অন্তরা মিত্র

ছবি
খো কা ঘুমোলো পাড়া জুড়োলো বর্গী এল দেশে। বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেবো কিসে। সেই কোন সুদূর অতীতে 'ত্রাহি' রব উঠেছিল বর্গি হাঙ্গামায়। নবাব আলিবর্দির শাসনকালে ১৭৪২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দশ বছর ধরে পশ্চিমবাংলার বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে বর্গিরা লুঠতরাজ চালায়। নির্বিচার হত্যা, অগ্নি-সংযোগ, ফসল বিনষ্টির পর নবাবের তৎপরতায় হাঙ্গামার অবসান ঘটে। কিন্তু শ্বাসরোধকারী স্মৃতিটি থাকে টাটকা। বছরের পর বছর ঘুমপাড়ানি লোকছড়া তাকে বুকে করে বয়ে চলে। এটাই লোকসাহিত্যের ইতিহাস চেতনা। কোন বিশেষ যুগের পাথুরে প্রমাণ নয়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যাকে বলেছেন 'আস্ত জগতের ভাঙ্গা টুকরো' লোকসাহিত্য তাই-ই জড়ো করে চলে। এটিই তার বৈশিষ্ট্য, এ-সাহিত্য অজ্ঞাত-উৎস, শ্রুতিনির্ভর, ঐতিহ্যাশ্রয়ী চলমান। সংহত সমাজমানস যেখানে সক্রিয়, সেখানেই লোকসাহিত্যের উৎসার। যে-সব ঘটনায় সমাজচৈতন্য আলোড়িত হয়, দুঃখ পায়, আনন্দে উথলে ওঠে, প্রতিবাদে মুখর হয় কিংবা শ্রদ্ধায় নুয়ে পড়ে লোকসাহিত্য তার সৃষ্টির মধ্যে ধরে রাখে সেগুলি। এইভাবেই তার বিস্তৃতি ধূসর অতীত থেকে অনাগত ভবিষ্যতে। লোকবিজ্ঞানী R. M...

লোকসংস্কৃতি : সংজ্ঞা স্বরূপ শ্রেণীবিভাগ অনুশীলন পদ্ধতি - মানস মজুমদার

ছবি
লো কসংস্কৃতি-র আলোচনায় 'লোক' বলতে কোনও একজন মানুষকে বোঝায় না। বোঝায় এমন একদল মানুষকে যারা সংহত একটি সমাজের বাসিন্দা। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট একটি ভূখণ্ডে তারা বসবাস করে, তাদের আর্থিক কাঠামো একইরকম, জন্ম থেকে মৃত্যু এবং বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকলে এক ধরনের বিশ্বাস-সংস্কার, আচার-আচরণ, প্রথা-পদ্ধতি, উৎসব- অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। 'সংস্কৃতি' হল সভ্যতাজনিত উৎকর্ষ। এ উৎকর্ষ জীবনচর্যার। সংস্কৃতি অনুশীলন-নির্ভর, কাল পরম্পরায় বহমান, ক্রমপরিবর্তনশীল। 'লোকসংস্কৃতি' হল তাই, যাতে লোকসমাজের সভ্যতাজনিত উৎকর্ষের প্রতিফলন ঘটে। লোকসমাজের জীবনচর্যার উন্নত রূপটি প্রকাশ পায়।  লোকসংস্কৃতিকে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা চলে। যেমন: বস্তুকেন্দ্রিক, বিশ্বাস- অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক, খেলাধুলাকেন্দ্রিক, বাককেন্দ্রিক, অঙ্গভঙ্গিকেন্দ্রিক, লিখন বা অঙ্কনকেন্দ্রিক।  বস্তুকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির উদাহরণ লোকসমাজে ব্যবহৃত বস্তুসমূহ। ঘরবাড়ি, খাদ্যপানীয়, পরিধান ও প্রসাধনদ্রব্য, কৃষি ও শিকার সরঞ্জাম, আসবাবপত্র, যানবাহন বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি। পাহাড়ি অঞ্চল আর সমতলভূমির ঘরবাড়ির ছাঁদ এক নয়। যে-অঞ্...