জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ - এক নজরে সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য
National Education Policy 2020 সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য
নতুন শিক্ষানীতির খসড়া প্রস্তুতির সময় ইসরোর প্রাক্তন প্রধান কে কস্তুরিরসনের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছিল কেন্দ্র।
আগে শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ছিল ১০+২ ভিত্তিতে। সেই কাঠামো পুরোপুরি ভেঙে New Nation Education Policy -তে তা করা হয়েছে ভেঙে ৫+৩+৩+৪ অর্থাৎ, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে আরও তিন বছর যোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম তিন বছর প্রাক প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা। প্রি-প্রাইমারি স্তরের জন্য সারা দেশে একটি অ্যাকটিভিটি ও লার্নিং বেসড শিক্ষানীতি তৈরি হবে বলে জানানো হয়েছে। তার জন্য জাতীয় শিক্ষা মিশন গঠিত হবে। বোর্ড পরীক্ষার গুরুত্ব কমানোর কথা বলা হয়েছে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে।
স্কুল শিক্ষায় বড় পরিবর্তন আসছে বর্তমানের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠদানের পদ্ধতিতে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় দশম শ্রেণি পাশ করার পর বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য এই তিন বিভাগে ভাগ হয়ে যায় পড়াশোনার বিষয়। কিন্তু নতুন শিক্ষা নীতিতে এই বিভাগগুলিই উঠে যাবে।
উচ্চশিক্ষাতে যে বড়সড় রদবদলের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম মাল্টিপল এন্ট্রি ব্র্যান্ড এক্সিট সিস্টেম চালু করা। অর্থাৎ, শিক্ষাবর্ষের মাঝে কোনও পড়ুয়া কোনও কারণে মাঝপথে পড়া ছেড়ে দিলে পরে আবার সেখান থেকেই শুরু করতে পারবেন। একইভাবে স্নাতকোত্তর ব্যবস্থার পরিবর্তন এসেছে। সেখানে কেউ গবেষণা করতে চাইলে ৪ বছরের ডিগ্রি কোর্স করতে পারেন। আবার ৩ বছর স্নাতক স্তরে এবং এক বছর স্নাতকোত্তর পড়ার পরে সরাসরি পিএইচডি করতে পারবেন।
এক নভাবে দেখে নেওয়া যাক, প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষায় কী কী বদল এল (Points on New National Education Policy)
১) প্রথমেই যে বিষয়টি বলতে হয় তা হল, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নাম বদলে হল শিক্ষামন্ত্রক। দেশের স্বাধীনতার পর থেকে এই নামেই পরিচিত ছিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক। পরে ১৯৮৫ সালে তা বদল হয়।
(২) নতুন শিক্ষানীতিতে সকলের অন্য শিক্ষার অধিকার। এর আওতায় আনা হয়েছে ৩ থেকে ১৮ বছরের পড়ুয়াদের।
(৩) নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে দশম বা দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় পড়ুয়াদের এখন হাতেকলমে শিক্ষায় জোর দিতে হবে। পড়ুয়াদের উপর থেকে চাপ কমানোর জন্য দু'ভাবে পরীক্ষা দেওয়া হবে- অবজেকটিভ (ছোটো প্রশ্ন) এবং ডেমক্রিপটিক (ব্যাখ্যামূলক)। বছরে দু'বার বোর্ড পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।
৪) পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় জোর। প্রতিবছরের বদলে তৃতীয়, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব।
৫) ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে বৃত্তিমূলক শিক্ষা। দশম শ্রেণির পর কলা বিভাগ, বিজ্ঞান বিভাগ বা বাণিজ্য বিভাগের প্রভাত উঠে যাচ্ছে। যেমন, কেউ পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়লেও তার পাশে থাকতে পারে সঙ্গীত। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন নিয়ে পড়লেও থাকবে ফ্যাশন ডিজাইনিং পড়ার সুযোগ।
৬) New National Education Policy অনুসারে, মার্কশিট শুধুমাত্র নম্বর এবং পরিসংখ্যানের পরিবর্তে এবার প্রাধান্য পাবে পড়ুয়ার দক্ষতা এবং যোগ্যতার বিষয়টি। কারও উপর জোর করে কোনও ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হবে না। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষা ও আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষা ঐদিক হিসেবে ধরা হবে।
৭) শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের প্রয়োগিক দিকের উপরে ভিত্তি করে বোর্ডের পরীক্ষা নেওয়া হবে। দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষায় ৮ টি সেমেস্টারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ৫+৩+৩-৪ ভাগে ১৫ বছরের স্কুল স্তরে পড়াশোনা। এর মধ্যে তিন বছর প্রি-স্কুল পড়াশোনার সুপারিশ করা হয়েছে।
৮) স্নাতক স্তরে অনার্স কোর্স ৪ বছর পর্যন্ত হতে পারে। তবে প্রতি বছরের শেষে পড়ুয়ারা পাবেন সার্টিফিকেট। কোর্স শুরুর ১২ মাসের মধ্যে পড়াশোনা শেড়ে দিলে পড়ুয়ারা পাবেন ভোকেশনাল কোর্সের সার্টিফিকেট। দু'বছর বা ২৪ মাস পর ছাড়লে মিলবে ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট। চার বছরের কোর্স করলেই পাওয়া যাবে ডিগ্রি কোর্সের সার্টিফিকেট। ফলে চাকরির ক্ষেত্রে সুবিধা হবে বলে দাবি। এবার থেকে M.Phil কোর্স উঠে যাচ্ছে।
২০৩৫ সালের মধ্যে গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিয়ো' ৫০ শতাংশ করার লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্র। যাঁরা মাঝপথে কোনও স্নাতক বা স্নাতকোত্তর কোর্সে যোগ দিতে বা ছেড়ে দিতে চান, সেজন্য একাধিক সুবিধা থাকছে। তিন বা চার বছরের স্নাতক স্তরে এবং এক বা দু'বছরের স্নাতকোত্তর কোর্স চলবে। কোর্সে যোগ দেওয়া বা ছেড়ে দেওয়ার সময় 'অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট' এর মাধ্যমে ওই পড়ুয়াদের ক্রেডিট দেওয়া হবে। পাঁচ বছরের ইন্টিগ্রেটেড স্নাতক বা স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হবে।
৯) ২০৩০ সালের মধ্যে শিক্ষকতার ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা হবে ৪ বছরের ইন্টিগ্রেটেড বি.এড ডিগ্রি। শিক্ষকদের জন্য একটি নয়া এবং বিস্তারিত ‘ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক ফর টিচারস এডুকেশন' (এনসিএফটিই ২০২১) তৈরি করবে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচারস এডুকেশন (এনসিটিই)। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (এনসিইআরটি) সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সেই নয়া কাঠামো তৈরি হবে।
১০) আইন বা Law এবং মেডিক্যাল ছাড়া বাকি সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার ছাতার তলায় আসতে চলেছে।
১১) সরকারি এবং বেসরকারি, সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অভিন্ন রেগুলেশন চালু হবে।
১২) যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষা ক্ষেত্রে জিডিপির ৬ শতাংশ লগ্নি করবে সরকার।
১৩) আঞ্চলিক ভাষায় অনলাইন কোর্সে জোর। ১৪) সবার কাছে শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার উপর বিশেষ জোর। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দেশে ১০০ শতাংশ স্বাক্ষরতার লক্ষ্য পূরণ করতে চাইছে কেন্দ্ৰ।
◾ নয়া নীতিতে কী কী গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক :
১) পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় জোর।
২) স্কুলের পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্ত করে মূল ধারনায় নামিয়ে আনা।
৩) ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে বৃত্তিমূলক শিক্ষা
৪) মার্কশিটে শুধুমাত্র নম্বর এবং পরিসংখ্যানের পরিবর্তে প্রাধান্য পাবে পড়ুয়ার দক্ষতা এবং যোগ্যতা।
৫) পড়ুয়াদের জ্ঞানের প্রয়োগিক দিকের উপরে ভিত্তি করে বোর্ডের পরীক্ষা নেওয়া হবে।
৬) M.Phil কোর্স উঠে যেতে চলেছে।
৭) ল' এবং মেডিক্যাল ছাড়া বাকি সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার ছাতার তলায় আসতে চলেছে।
৮) সরকারি এবং বেসরকারি নির্বিশেষে সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অভিন্ন রেগুলেশন চালু হবে।
৯) যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষা ক্ষেত্রে জিডিপির ৬ শতাংশ লগ্নি করবে সরকার।
১০) যে কোনও অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিদর্শনের পরিবর্তে স্বচ্ছতা ভিত্তিক স্বঘোষিত ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে।
১১) আঞ্চলিক ভাষায় অনলাইন কোর্সে জোর।
১২) সবার কাছে শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার উপরে জোর। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দেশে ১০০ শতাংশ স্বাক্ষরতার লক্ষ্য পূরণ।